-খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ
বঙ্গবন্ধুর শোষনহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠলো না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র হয়ে উঠলো শোষক আর জনগন হতে লাগলো শোষিত। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “বিশ^ দুভাগে বিভক্ত। শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।” তাই বুঝি দেশ-বিদেশের শোষকেরা একজোট হয়ে শোষিতের কান্ডারীকে হত্যা করলো। রাষ্ট্রকে শোষনযন্ত্র বানানোর জন্য। শোষিত স্বল্পবিত্ত নাগরিকদের ‘দাবিয়ে রাখার জন্য’ তাদের ওপর শাসন-শোষন চালানোর জন্য। কিন্তু অবাক হই, ব্যাথিত হই, যখন দেখি বঙ্গবন্ধু-কন্যার দশককালের অধিক সময়ে ক্ষমতায় থাকা সত্বেও স্বল্পবিত্তের শোষন প্রক্রিয়া শুধু অব্যাহতই থাকেনি, আরো শক্তিশালী হয়েছে। পক্ষান্তরে রাজনৈতিক সরকারের ওপর অতিধনীদের প্রভাব বেড়েই চলেছে। বঙ্গবন্ধু সংবিধানে লিখে গিয়েছিলেন “প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ [৭(১)]”, নাগরিকের মালকানা এখন ছিনিয়ে নিয়েছে স্বল্প সংখ্যক নব্যধনিক গোষ্ঠি। রাষ্ট্র এখন তাদের। তারা এখন রাজা। নাগরিকেরা হয়েছে প্রজা। ধনীদের শনৈ শনৈ উন্নতি। অতি-ধনীদের সংখ্যাবৃদ্ধির দিক থেকে সারাবিশে^ বাংলাদেশ প্রথম স্থান অধিকার করেছে। এদেশে অতি-ধনীদের সংখ্যা বৃদ্ধির হার শতকরা ১৭, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনকে ও অতিক্রম করে গেছে। এই পরিসংখ্যান থেকে বাংলাদেশে শোষনের ব্যাপ্তি ও গভীরতার ঈঙ্গিত পাওয়া যায়। শোষনের দু’একটি প্রক্রিয়া এবং দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা যাক।
বাংলাদেশে কোন নাগরিকের বার্ষিক আয় ২.৫০ লক্ষ টাকা হলেই তাকে আয়কর দিতে হয়। ধনী দেশের সাথে তুলনা করতে চাই না। বাংলাদেশের মতই দরিদ্র ও উন্নয়শীল পাশর্^বর্তীদেশ ভারতে কোন নাগরিকের বার্ষিক আয় ৫ লক্ষ রুপী (বাংলাদেশের ৬ লক্ষ টাকা) হলে আয়কর প্রদান করতে হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশী ৬ লক্ষ টাকার বেশী আয় না হলে একজন ভারতীর নাগরিককে ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয় না। এর অর্থ দাঁড়ায় এই যে, ভারত স্বল্প আয়ের মানুষদের একটু ভালো রাখতে চায়। বছরে ৬ লক্ষ টাকার সমপরিমান আয়ের অর্থ হলো গড়ে মাসিক আয় পঞ্চাশ হাজার টাকা। ভারতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দাম এবং মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করলে মাসিক পঞ্চাশ হাজার টাকা আয়ে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবনযাত্রা স্বাচ্ছন্দে চলে যায়। এর বিপরিতে বাংলাদেশে মাসিক মাত্র দুই হাজার টাকা আয়ে, মধ্যবিত্ত দূরের কথা, নি¤œ ও স্বল্পবিত্তেরও সংসার চলে না। এই স্বল্প আয় থেকে ট্যাক্স কেটে নিলে গভীর সংকটে থাকে পরিবার। মাসিক দুই হাজার টাকার মধ্যে ৪/৫জনের খাওয়া খরচ, কাপড়-চোপড়, বাড়ীভাড়া, চিকিৎসা এবং যাতায়াত খরচ কিভাবে চলতে পারে, তা হিসাবকেই বিপর্য্যস্ত করে ফেলে। কিভাবে চলছে, তাও একটু দেখা যাক। খাবারের তালিকায় মাছ-মাংস প্রায় অনুপস্থিত। কখনো শবজি আবার কখনো ভর্তা ভাজি। ডাল ও নিয়মিত থাকে না। ছেলে-মেয়েদের খাইয়ে কখনো বাবা-মা আধা-পেট খান। কখোন উপোষ থাকতে হয়। পরিচ্ছদ বলতে এক কাপড়ে চলেন অনেকেই। কেউ আবার কমদামে পুরোনো কাপড় ক্রয় করেন। আমি দর্জির দোকানে স্বচক্ষে দেখেছি, দু’ভাই একসাথে এসে দু’জনের জন্য একটি প্যান্ট তৈরীর অর্ডার দিচ্ছে। বাইরে যাবার সময় যার বেশী প্রয়োজন (ইন্টারভিউ ইত্যাদি) সে পরবে। দর্জির ব্যবস্থাপনা দেখে মনে হলো, সে এ ধরনের কাজে অভ্যস্ত।
বাড়ীভাড়ার বিষয়টি আরো বিস্ময়কর। বিশেষ করে ঢাকার মত মহানগরীতে। দু’কক্ষের একটি ছোট্ট বাসায় দু’টি পরিবার একত্রে বসবাস এখন বহুল প্রচলিত। এছাড়া সরকারী কোয়ার্টারে বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি অন্যকে ভাড়া দিয়ে নিজে মেসে থাকেন, এমন দৃষ্টান্ত বিরল নয়। এরপরে ও বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির বিল যেন বোঝার ওপর শাকের আঁটি।
চিকিৎসার অবস্থা স্বল্প ও মধ্যবিত্তের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয়। ভীষণ কষ্টকর বা বেদনাদায়ক নাহলে কোন অসুখকে অসুখ জ্ঞান করেন না অনেকেই। ডাক্তারের কাছে যাওয়া অর্থই হলো সংসারের ব্যয়ে চাপসৃষ্টি। অতি প্রয়োজনে সরকারি স্বাস্থ্যসেবাই গ্রহণ করা হয়। সরকারী স্বাস্থ্যসেবা অর্থাৎ প্রেসকিপশন। তদনুযায়ী ঔষধ কিনতে গেলেই বিপত্তি। তাই ডাক্তারের ওপর ডাক্তারী করে অনেকে ৩টির মধ্যে ১টি অসুধ কেনেন। একমাস খাবার কথা থাকলে ১ সপ্তাহ খান। ঔষধের দোকানে গিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করলে বাস্তব চিত্র অবলোকন করা যায়। অনেক রোগী এসে দোকানের সেলসম্যানের কাছে অসুখের বর্ননা দিয়ে অসুধ দিতে বলেন। বিক্রেতাদের এ বিষয়ে অভ্যস্ত মনে হয়। তারা সাধারনভাবে ব্যবহার যোগ্য কিছু অসুধ দিয়ে দেন। এছাড়া অনেক রোগী বিনামূল্যে পানিপড়া, দোয়া-তাবিজেই সন্তষ্ট থাকেন।
অধুনা আরো একটি বিষয় যুক্ত হয়েছে। বৃদ্ধ মা-বাবাকে সংসারের বোঝা মনে করা হয়। বৃদ্ধ মা-বাবার প্রয়োজন একটু ভিন্ন খাবার। কিন্তু দু’হাজার টাকা আয়ে তো ব্যয় সংকুলান হয়না। পরিবার প্রধানের দ্বন্দ থাকে, মা-বাবাকে একটু পুষ্টিকর খাবার দেবে, নাকি নিজ সন্তানের প্রয়োজন মেটাবে। ঢাকার আশেপাশে বৃদ্ধ নিবাস রয়েছে। আমি গিয়েছি, বৃদ্ধদের সাথে আলাপ করেছি। আমার ভূল ভেঙ্গেছে। এখানে মধ্যবিত্ত ঘরের বৃদ্ধ-বদ্ধাদের সংখ্যাই বেশী। সন্তানদের আর্থিক অবস্থা খারাপ নয়। তবুও মা-বাবাকে বৃদ্ধনিবাসে থাকতে হচ্ছে। এখানে আর্থিক দুরাবস্থার সাথে মানসিক দৈন্যের সমাবেশ ঘটেছে।
বর্তমানকালে স্বল্প বা মধ্যবিত্তের ঘরে আরেকটি নতুন উপাদান যোগ হয়েছে। স্বামীর স্বল্প আয়ে যখন টানাটানিতে ও সংসার চলে না, তখন স্ত্রী ও আয়ের সাথী হন। উচ্চ শিক্ষিত হলে, ভালো চাকুরীই পেয়ে যান। কম শিক্ষিত হলে, ছোটখাট কাজ করে কিছু আয় উপার্জনের চেষ্টা করেন। উদ্দেশ্য একটাই। আর্থিক অসচ্ছলতার উত্তাল তরঙ্গে সংসারের ছোট্ট তরীটি যেন ডুবে না যায়। দু’জনের আয়ে গোজামিলে সামাল দেয়া যায়। কিন্তু দারুন কষ্টে নিপতিত হয় শিশু সন্তান।
ওপরে যে বনর্নাগুলো দিলাম, সবগুলোই কিন্তু রাষ্ট্র কর্তৃক নিগৃহীত আয়কর প্রদানকারীদের কথা। মাসিক দু’হাজার টাকা রোজগার করা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হয়তো আয়কর ফাঁকি দিতে পারেন। কিন্তু চাকুরীজীবিদের অবস্থা বেঁধে রেখে পিটুনি দেবার মত। এদের বেতন থেকে আয়কর কেটে রাখে নিয়োগকারী। বেতনের অবশিষ্ট টাকা চাকুরীজীবির হাতে তুলে দেয়া হয়। তার অর্থ দাঁড়ায়, দু’হাজার টাকা মাসিক বেতনের চাকুরীজীবি প্রকৃতপক্ষে বেতন পান কমবেশী আঠারশ টাকার মত। আঠারশত টাকা বেতন হলে, আয়কর দিতে হবে না। কিন্তু দু’হাজার টাকা বেতন হলে, আয়কর কেটে আঠারশ টাকা হাতে পাবে। সরকার কি আঠারশত টাকায় সংসার চালানোর হিসাবটা মিলিয়ে দিতে পারবেন?
বাংলাদেশের নাগরিকদের মাথাপিছু বার্ষিক গড় আয় কমবেশী ১৯০০ ডলার ছিল। এখন ২০০০ ডলার হবে। অর্থাৎ ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। এই গড় আয় কিন্তু কারো প্রকৃত আয় নয়। ধরা যাক, একজনের প্রকৃত আয় ১০ লক্ষ টাকা, আরেকজনের ১০ হাজার টাকা। তাহলে তাদের প্রতিজনের গড় আয় দাঁড়ায় ৫ লক্ষ ৫ হাজার টাকা, যা উচ্চআয়ের ব্যাক্তিটির প্রকৃতআয়ের প্রায় অর্ধেক এবং নি¤œআয়ের লোকটির প্রকৃত আয়ের প্রায় ৫০গুন বেশী। দেশে হতদরিদ্রের সংখ্যা ১০% এবং দরিদ্রের সংখ্যা ২০%। এরা আজকের টার্গেট গ্রুপের অনেক নীচে। দেশের অর্ধেকের বেশী সম্পদ শতকরা মাত্র ১০ভাগ অতিধনী মানুষের কাছে। অনেকের প্রশ্ন, অতিধনীরা কতটাকা আয়কর দেন? এ পরিসংখ্যান জনগনের কাছে পরিবেশিত হয় না।
জাতীয় আয়ের কত অংশ টাকা কর হিসাবে সরকার আয় করে থাকে, তার পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। ট্যাক্স: জিডিপি অনুপাত বাংলাদেশে মাত্র ১০ ভাগ। পাশর্^বর্তী দেশ ভারতে এই অনুপাত ২০ভাগ, নেপালে ২৫ ভাগ। এর সাদামাটা অর্থ হলো, ভারতে এবং নেপালে অতিধনী এবং ধনীরা ট্যাক্স দেয়, সেজন্যে তাদের ট্যাক্স আদায়ের অনুপাত বেশী। বাংলাদেশে অতিধনী ও ধনীরা হয় ট্যাক্স দেয় না অথবা ফকিরকে ভিক্ষা প্রদানের মত যৎ সামান্য ট্যাক্স দেয়। বাংলাদেশে স্বল্পবিত্তের কাছ থেকে নিংড়ে ট্যাক্স আদায় করা হয় ধনীদের রেহাই দেবার জন্য। একটি প্রশ্ন এখানে প্রাসঙ্গিক। ভারত ৬ লক্ষ টাকার নিচে যাদের বার্ষিক আয়, তাদের আয়কর থেকে রেহাই দিয়েও জিডিপির শতকরা ২০ভাগ কর আদায় করে। সেখানে বাংলাদেশে মাত্র ২.৫০ লক্ষ টাকা বার্ষিক আয়ের ব্যক্তির কাছ থেকে কর আদায় করেও জিডিপির মাত্র ১০ভাগ কর আদায় করছে কেন? আয়কর কি গরীব মারার ব্যবস্থা? নাকি অতিধনীর কাছ থেকে কর আদায় করে স্বল্পবিত্তের মানুষের জন্য ব্যয় করার ব্যবস্থা? রাজস্ব বোর্ডের উচিৎ এ বিষয়ে গবেষনা পরিচালনা করা। তবে মানুষের ধারনা এরকম যে, শাক্তিশালী ধনীচক্রের কাছ থেকে সঠিক পরিমান আয়কর আদায় দূরের কথা, তাদের ধারের কাছে ঘেষার সাধ্য আয়কর বিভাগের নাই। আরেক শ্রেণীর ধনী রয়েছেন, যারা স্বল্প পরিমান কর পরিশোধ করেন এবং নথি ঠিক রাখার জন্য কিছু উপহার প্রদান করেন কর্মকর্তাদের। এর বিপরিতে সুদাসলে কর আদায় করা হয় স্বল্প ও মধ্যবিত্তের কাছ থেকে, যারা ক্ষমতার দিক থেকে দুর্বল। স্বল্প-মধ্যবিত্তের কাছ থেকে আদায়কৃত আয়করই জিডিপির শতকরা ১০ভাগ।
রাজস্ব বোর্ড প্রায়ই কর্মচারী স্বল্পতার কথা বলে থাকে। দেশের অগুনিত চুনোপুটি ধরার জন্য কর্মচারী বহর বাড়িয়ে লাভ নাই। খাজনার চেয়ে বাজনা বেশী হবে। অগ্রাধিকারের নজরটা চুনোপুটির দিক থেকে সরিয়ে রাঘব-বোয়ালদের দিকে ফেরান। রাঘববোয়ালদের সংখ্যা কম এবং আয় সম্পদ অনেক বেশী। অধিক সংখ্যক আয়কর কর্মকর্তার প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন ক্ষমতার সদিচ্ছার এবং সততার। ধনীদের প্রতিটি নথি আপোষের বিনিময়ে বিস্তর অর্থপ্রাপ্তি ঘটে। পারবেন লোভ সামলাতে? লোভ সামলানোর মত ঈমানদার লোক ও স্বল্প সংখ্যায় রয়েছেন। বিগত সময়ে কষ্টমসে সৎ কর্মকর্তার হয়রানী এবং প্রাননাশের ঘটনা ও আমরা প্রতক্ষ করেছি। তাই মূল কথা হলো, অতি ধনীদের ক্ষমতা ও দু:সাহসের লাগাম টেনে ধরতে হবে। আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এখানেই প্রয়োজন রাষ্ট্রযন্ত্র তথা সরকারের কমিটমেন্ট ও সহায়তা। আয়কর সংস্কার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কারন এটি একটি দ্বিমুখী অস্ত্র। বাজেটের একটা বড় অংশ যোগান দেয় আয়কর। যোগান কম হলে ঋন বেড়ে যাবে, যা কাঙ্খিত নয়। যোগান বেশী হলে, বাজেটের মাধ্যমে স্বল্পবিত্তদের জন্য রাষ্ট্রীয় ব্যয় বাড়ানো যায়, যা আয়-বৈষম্য হ্রাসে সহায়ক। একই সাথে উচ্চবিত্তের কাছ থেকে আয়কর আহরন করতে পারলেও আয় বৈষম্য কমবে।
সুইডেন, ডেনমার্ক, নরওয়ে সহ স্ক্যন্ডিনোভিয়ান রাষ্ট্রসমুহ ইউরোপে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত অথচ নি¤œতম আয় বৈষম্যের দেশ হিসাবে সুনামের অধিকারী। এসব দেশে জিনি কোয়েফিশিয়েন্ট দশমিক তিন ভাগের আশেপাশে রয়েছে, যা নি¤œ পর্যায়ের আয়বৈষম্য নির্দেশ করে। বর্তমানে জার্মানী, সুইজারল্যন্ড সহ আরো কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ দ্রুত আয়-সম্পদ বৈষম্য কমিয়ে আনছে। স্বল্প আয়বৈষম্য মানবধিকার তথা সভ্যতার নির্দেশক। বাংলাদেশ যতই জাতীীয় আয় প্রবৃদ্ধির বড়াই করুক না কেন, আয় ও সম্পদের বৈষম্যের দিক থেকে এর অবস্থান লজ্জাজনক। দশমিক চার নয় (.৪৯) জিনি সহগ নিয়ে বাংলাদেশ একটি নিপীড়ক রাষ্ট্রে পরিগনিত। বঙ্গবন্ধুর স্বল্প বৈষম্যের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করতে হলে, জিনি সহগ দশমিক চারের নীচে নামিয়ে আনতে হবে।
ইউরোপিয় রাষ্ট্রসমুহের প্রদর্শিত সাফল্য অনুকরন করে আয়কর সংস্কারের মাধ্যমে এই পথে বেশ খানিকটা অগ্রসর হওয়া সম্ভব। এই সংস্কারের লক্ষ্য হবে তিনটি (১) আয়কর-জিডিপি অনুপাত অন্তত: ভারতের সমান অর্থাৎ শতকরা বিশে উন্নীত করতে হবে। (২) স্বল্প আয়ের কষ্টে থাকা নাগরিকদের কষ্ট লাঘবের জন্য নি¤œতম আয়কর যোগ্য বার্ষিক আয় ছয় লক্ষ টাকা (ভারতের পাঁচ লক্ষ রুপীর সমান) নির্ধারণ করতে হবে। (৩) আয়কর আদায় তৎপরতা সফল করতে হবে অতিধনীদের থেকে শুরু করে নীচের দিকে। উল্টোটা নয়। এই লক্ষ্যে রাজস্ব বোর্ড সম্পদের পরিমান অনুযায়ী একটি তালিকা প্রতিবছর রেডি রেফারেন্সের জন্য প্রস্তুত করবে। নমুনা তালিকা নিম্ররূপ হতে পারেঃ
(ক) ১০০০ কোটি টাকার উর্দ্ধে সম্পদ আছে, এমন ব্যাক্তি/প্রতিষ্ঠানের তালিকায় কতজন আছে এবং কতটাকা আয়কর দিয়েছে। (খ) ৭৫০ কোটি টাকার উর্দ্ধে এবং ১০০০ কোটি টাকার নীচে সম্পদ রয়েছে, এমন ব্যাক্তি/প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবং তাদের প্রদত্ত আয়করের পরিমন। (গ) ৫০০ কোটি টাকার উদ্ধে এবং ৭৫০ কোটি টাকার নীচে সম্পদ, এমন ব্যাক্তি/প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবং প্রদত্ত আয়করের পরিমান। (ঘ) ২০০ কোটি টাকার উর্দ্ধে এবং ৫০০ কোটি টাকার নীচে সম্পদ, এমন ব্যাক্তি/প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবং আয়করের পরিমান। (ঙ) ৫০ কোটি টাকার উর্দ্ধে এবং ২০০ কোটি টাকার নীচে সম্পদ, এমন ব্যাক্তি/প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবং আয়করের পরিমান। (চ) ৫ কোটি টাকার উর্দ্ধে এবং ৫০ কোটি টাকার নীচে সম্পদ, এমন ব্যাক্তি/প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবং আয়করের পরিমান। এবং (ঘ) ৫ কোটি টাকার নীচে সম্পদ, এমন ব্যাক্তি/প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবং আয়করের পরিমান।
অধিক সম্পদের তালিকায় নিবিড় তদারকী থাকবে। ইনটেলিজেন্স ও কডিন্টার ইন্টিলিজেন্সের ফলপ্রসু ব্যবস্থা থাকতে হবে। সবকিছুর লক্ষ্য হবে আয়কর-জিডিপি অনুপাত অন্তত: শতকরা বিশভাগে উন্নীত করা, উচ্চ-আয়ের ব্যাক্তি/প্রতিষ্ঠানের আয়কর সঠিকভাবে আদায় করা এবং বার্ষিক ছয় লক্ষ টাকার নীচে স্বল্পআয়ের ব্যাক্তিদের আয়করের আওতার বাইরে রাখা। এসব কিছুই আয়-সম্পদ বৈষম্য কমাবে এবং সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে। এতে করে হিংসা-বিদ্বেষ হ্রাস পেয়ে সামাজিক সংহতি বৃদ্ধি পাবে।
0 Comments