শাহরিন শাহান ছোঁয়া
ভিন্ন চিন্তাধারার তিন কবি, যাঁদের অবদানে আজ বাংলা কাব্যসাহিত্য সমগ্র বিশে^ খ্যাতি লাভ করেছে তাঁরা আর কেউ ননÑআমাদের বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্য। আমাদের বাংলা সাহিত্যে তাঁদের অবদান অভাবনীয়। তাঁরা বাংলা সাহিত্যকে দিয়েছিলেন নতুন পথের দিশা। প্রতিবছরের মত এ বছরও তাঁদের স্মরণে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলায় উদ্যাপন করা হয় রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত স্মরণোৎসব।
রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত স্মরণোৎসব উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচা মিলনায়তনে ২৬ জুলাই ২০১৯, শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটায় আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করে মেলার ছোটবোন অরিন এবং মেলার ছোটভাই কাব্য। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোঃ দিদারুল আলম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মেলার সভাপতি খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, মেলার প্রবীণ সদস্য বদরুল আলম এবং শিশু বক্তা ধ্রুব বণিক। সভাপতিত্ব করে মেলার কর্মীভাই আদিব কিবরিয়া। প্রতিমাসের মত এই মাসেও মেলার গল্পবলা ও বইপড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। গত ১৯ জুলাই ২০১৯ তারিখে অনুষ্ঠিত গল্পবলা ও বইপড়া দ্বিতীয় প্রান্তিক প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়ে থাকে অনুষ্ঠানে।
অনুষ্ঠানে প্রথমে বক্তব্য রাখেন মেলার প্রবীণ সদস্য বদরুল আলম। তিনি তাঁর বক্তৃতায় কবিগুরুর কথা স্মরণ করেন। তিনি নজরুলের বিদ্রোহ কবিতার কথা তুলে ধরে বলেন যে, তাঁর বিদ্রোহী কবিতা মানুষের মনের সাহসের সঞ্চার করেছিল। রবীন্দ্রনাথের প্রতিভা সম্পর্কে তিনি আলোচনা করেন। একুশ বছরের অল্প জীবনে সুকান্তের সাহিত্যের প্রতি অবদান নিয়েও তিনি কথা বলেন।
এরপর বক্তৃতা করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোঃ দিদারুল আলম। তিনি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতাগুলোর মধ্যে যে মানুষের বঞ্চনার কথা তুলে ধরতেন সে বিষয়ে আলোচনা করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সর্বমুখী প্রতিভার কথা তিনি তুলে ধরেন। ভবিষ্যতের সকল শিশুকে কবিগুরুর আদর্শে এ পথ চলার কথা তিনি তুলে ধরেন। নজরুলের সকল সময়ের বিদ্রোহী কবিতা মুক্তিযুদ্ধে ঝঁপিয়ে পড়ার জন্য মানুষের মধ্যে যে সাহস জুগিয়েছিল তিনি কচি-কাঁচাদের সেইসব অনুপ্রেরণার গল্প শোনান।
বক্তব্য রাখে মেলার ছোটভাই শিশু বক্তা ধ্রুব বণিক। ছোটভাই ধ্রুব কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম এবং সুকান্ত ভট্টাচার্যের জীবন সম্পর্কে সকলকে জানায়। তাঁদের জীবন কাহিনী তাকে অনুপ্রেরণা জাগায়। তাঁদের প্রতিভা তাকে মুগ্ধ করে। বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-সুকান্তের মত কবিরা রয়েছেন তা তাকে খুবই গর্বিত বোধ করায়।
মেলার সভাপতি খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নিজের বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, বাংলার মানুষকে জাগিয়ে তোলার জন্য রবীন্দ্রনাথ-নজরুল সকল সময়ে পরোক্ষ বা কখনো সরাসরিভাবে অংশ নিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর লেখার মধ্যে আঁকিবুকি করতেন। এ বিষয়ে তিনি কচি-কাঁচাদের জানান। নজরুলের বিদ্রোহী সত্তা এ দেশের মানুষকে আত্মসচেতন করতে সাহায্য করেছিল। রবীন্দ্রনাথ একমাত্র কবি যিনি দুটি রাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা। তিনি আরও বলেন, আত্মপ্রচারবিমুখ কবি ছিলেন সুকান্ত। তাঁর কবিতায় তিনি মানুষের বঞ্চনা ও কাতর যন্ত্রণার চিত্র তুলে ধরতেন। তিন খ্যাতিমান কবির কথা আবারও স্মরণ করে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
সবশেষে বক্তব্য রাখে অনুষ্ঠানের সভাপতি ছোটভাই আদিব কিবরিয়া। প্রথমেই সে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বিদ্রোহ কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও বিপ্লবী কবি সুকান্তের কথা স্মরণ করে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নিজের বক্তব্য শুরু করে। তাঁদের সাহিত্যকর্মের ফলেই আজ বাংলার সাহিত্য বিশ^দরবারে সুপরিচিত বলে আদিব উল্লেখ করে। তাঁদের সাহিত্য পাঠ করতে ভাল লাগে এবং তাঁদের সাহিত্য তাঁকে অনুপ্রেরণা জোগায় বলে সে সকলকে জানায়।
অনুষ্ঠানের শেষে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার ভাইবোনেরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।
0 Comments