Header Ads Widget

Responsive Advertisement

Ticker

6/recent/ticker-posts

কথাগুলো লেখা থাক খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

এক একটি প্রজন্মের কাছে অনেক কথা জানা থাকে। কিছু কথা মন খুলে বলা হয়। অনেক কথাই না বলা থেকে যায়। বলা কথার সামান্যই লেখা হয়। অনেক কথাই লেখা হয় না। ফলে নতুন প্রজন্মে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় হারিয়ে যায় অনেক কথা, অনেক তথ্য, অনেক সত্য। গ্রন্থাগার জ্ঞানের রক্ষিত ভান্ডার। যুগ-যুগান্তর ধরে, প্রজন্ম-প্রজন্মান্তরের লেখা ধারন করে রাখে অনেক তথ্য, অনেক অভিজ্ঞতা, অনেক উপলদ্ধি। জ্ঞানের সম্মিলন ঘটে। জ্ঞানের সম্প্রসারণ ঘটে। জ্ঞানের সমন্বয় ঘটে। নতুন প্রজন্ম সমৃদ্ধ হবার সুযোগ পায়।

এই প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু কথা বলব। কথাগুলো লিখে রাখবো। কেউ হয়তো বলবেন, বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব। ইতিহাস তাকে ধরে রাখবে। তাঁকে নিয়ে নতুন করে লেখার কি আছে। পচাত্তর থেকে নব্বই সাল পর্যন্ত কিছু অবাঞ্ছিত ব্যক্তি অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা জবর দখল করে ইতিহাসকে জিম্মি করে ফেলেছিল। ইতিহাসের সাবলিল গতি সাময়িকভাবে স্তিমিত হয়েছিল। মানুষ কথা বলতে পারেনি। প্রচারযন্ত্র বিকৃত ‘ইতিহাস’ রচনায় ব্যস্ত ছিল। রেডিও-টিভিতে ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারিত হয়নি। ভাবখানা এমন যে, বঙ্গবন্ধু নামে কেউ আবার ছিল নাকি কোন দিন। ‘পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী’ ‘খানসেনা’ এসব শব্দ নিষিদ্ধ ছিল। মুখ ফসকে শব্দগুলো বের হয়ে পড়লে খবর ছিল। তওবা-এস্তেগফার পড়তে হতো। এমন কি মুক্তিযুদ্ধকে জেনারেল জিয়ার সময় বলা হতো ‘স্বাধীনতা যুদ্ধ’। স্বাধীনতা যুদ্ধ বলতে আপত্তি নেই। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ বলতে লজ্জা কেন?

স্বাধীনতার পর থেকেই বঙ্গবন্ধু তথা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে হুইস্পার-ক্যম্পেইন তথা হেট-ক্যম্পেইন শুরু করা হয়েছিল সুপারিকল্পিতভাব। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীরা একাজগুলো অব্যহতভাবে করেছিল। তখনকার মার্কিন সরকার অর্থাৎ কিসিঞ্জার প্রশাসনের মদদ ছিল বলে ধারনা করা হয়। আই-এস-আই তথা পাকিস্তান সরকার অর্থ-উপাত্ত দিয়ে সরাসরি সাহায্য করতো। উদ্দেশ্য, স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারকে উপহাস করা হেয় প্রতিপন্ন করা এবং ফলশ্রুতিতে ভাবমুর্তী নষ্ট করে জনসমর্থন কমিয়ে আনা এবং পরবর্তীতে আঘাত হানা। দু’একটি উদাহরন দিচ্ছি। মতিঝিল কলোনীর কম্যুনিটি সেন্টার একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। দু’আড়াইশ অতিথি এসেছিলেন। বর আসতে দেরী হওয়ায় গল্প আর আলাপচারিতা চলছে। আমার কাছাকাছি বসা কয়েকজন যুবক। পোষাক-আষাকে বিত্তবান ঘরের সন্তান বলে মনে হলো। চার পাঁচজন একসাথে উচ্চস্বরে আলাপচারিতায় মাতিয়ে রাখছে। একপর্যায়ে কানে এলো কিছু অদ্ভুত কথা। ওদের একজন বলছে যে, বেগম তাজউদ্দিন হিন্দুর মেয়ে, ভারতের এজেন্ট। আমি ওদের দিকে এক নজর তাকিয়ে উঠে গেলাম। একটু দূরেই বসে ছিলেন বেগম জোহরা তাজউদ্দিনের বর্ষিয়ান পিতা। সফেদ শশ্রুমন্তিত, শুভ্র সৌম্য চেহারার মানুষ। আমি চিনতাম। কাছে গিয়ে তাঁকে সাথে করে নিয়ে এসে ঐ যুবকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বল্লাম, ইনিই বেগম তাজউদ্দিনের পিতা। কোলকাতায় আরবী-ফর্সীর অধ্যাপক ছিলেন। সৈয়দ বংশীয়। দেখে শুনে তারা বিব্রত হল, কিন্তু অনুতপ্ত হলো না। দুঃখ প্রকাশ করলো না। কোন কথাও বল্ল না। এভাবেই হুইস্পার-ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক তাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ছড়াছিল এই আপ-স্টার্ট যুবকেরা। এক সময়ে বাংলাদেশ সরকার এক টাকার নতুন নোট বাজারে ছেড়েছিল। নোটের একপাশে একজন গ্রাম্য মহিলা ধান ভানছিল। জোরালো হুইস্পার-ক্যাম্পেইন চলেছিল, ঐ ছবিটি শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনার। অর্থাৎ পিতা-কন্যার ছবিতেই নোট ছাপা হয়। তাছাড়া ধানভানা মেয়ের সাথে তুলনা করে শেখ হাসিনাকে হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যও ছিল। এগুজবটি এতই প্রচার পেয়েছিল যে, ঐ সময়ে অনেকেই তা শুনেছেন। আর একটি ঘটনার উল্লেখ করবো। পচাত্তর সালের ১৫ আগস্টের পর পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। আই-বি-এতে পড়াশুনা করেছি বলে সেখানে ঢুকলাম। প্রবেশ পথে পরিচিত গেটরক্ষী আমাকে দেখেই বলে উঠলো, ‘স্যার হুনছেন, শ্যাখের মওতের পর সারাদেশে কোন মুসলমান ইন্নালিল্লাহে পড়ে নাই।’ আমি দাঁড়ালাম। ধীরস্থির ভাবে তাকে বল্লাম, সারা দেশে সাড়ে সাত কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ছয় কোটিই তো মুসলমান। কেউ ইন্নালিল্লাহে পড়ে নাই, তুমি কি করে জেনেছ। তোমার কি মারেফতি বিদ্যা আছে নাকি? ছেলেটা হকচাকিয়ে গেল। কি যেন চিন্তা করে বল্ল, ‘তাই তো, আমি তো এতলোকের খবর জানি না। কিন্তু লোকে যে বলাবলি করছিল।’ এই হল হুইস্পার ক্যাম্পইনের নমুনা এবং মাজেজা। কখনো ধর্মের লেবাছে, কখনো লোকপ্রিয় ভাঙ্গিতে ঘৃনা ছড়ানো, অপবাদ দেয়া এবং ভাবমুর্তী নষ্ট করাই ছিল সুসংগঠিত, সুপরিকল্পিত ও সুপরিচালিত হুইস্পার ক্যাম্পেইনের লক্ষ্য। দুস্কৃতিকারীরা সাময়িকভাবে সফল হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিতভাবে তেমন কিছু করতে পারে নাই। তারা জীবিকার সন্ধানে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। বরং দুস্কৃতিকারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের ও বিভ্রান্ত করার প্রয়াস চালিয়েছিল।

পচাত্তরের পর থেকে অবৈধ ক্ষমতাদখলকারীরা ক্রমাগভাবে প্রচার করে যাচ্ছিল যে, শেখ মুজিব স্বাধীনতা চাননি, ঘোষনাও করেননি, তিনি পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন। সেকালের একজন অপরিচিত মেজর নাকি স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। তার ডাকেই নাকি মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। গোয়েবলস বেঁচে থাকলে তিনিও একথা শুনে লজ্জা পেতেন। আসলে কি ঘটেছিল? আমরা সে প্রজন্মের মানুষ। যা কিছু ঘটেছে নিজের চোখে দেখেছি। নিজের কানে সব শুনেছি। পচাত্তরের পর সত্য উচ্চারণে বাধা ছিল, বিপদ ছিল। তবু মিথ্যা উচ্চারণ করিনি। এখন সময় এসেছে নতুন প্রজন্মের কাছে স্বক্ষ্য দেবার। মিথ্যার কুয়াশা ভেদ করে সত্যের সূর্যরশ্মি ছড়িয়ে দেবার।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পর বঙ্গবন্ধু উপলদ্ধি করলেন যে, ভাষার অধিকারের সাথে সাথে অর্থনৈতিক তথা রাজনৈতিক অধিকার অর্জন করা প্রয়োজন। পাট রপ্তানী করে পূর্ণ বাংলা, বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে পশ্চিম পাকিস্তান। দেশের অর্ধাংশের বেশী মানুষ পূর্ব বাংলায়, অথচ সেনাবাহিনীর ৮০% পশ্চিম পাকিস্তানী। পন্যের বৃহত্তর বাজার পূর্ব বাংলা, আর শিল্প-ব্যবসার মালিকদের ৯৯% অবাঙালী। কার্যত: পূর্ব আর পশ্চিম, দুই ভিন্ন অর্থনীতির অঞ্চল। পশ্চিম শোষক আর পূর্ব শোষিত। ভেবেচিন্তে বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে ছয়দফা দাবী পেশ করলেন। নতুন প্রজন্ম ছয়দফা শব্দটি শুনেছে। কিন্তু ছয়দফা কি ছিল?  দাবীগুলোতে কি ছিল, তা অনেকেই জানে না। ছয়দফার মোটাদাগের দাবীগুলো ছিল, (ক) পূর্ব বাংলার মুদ্রা পৃথক হবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক পৃথক হবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের দু’অংশের পৃথক হিসাব রাখবে, (খ) পূর্ব বাংলার নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী গড়ে তোলা হবে, (গ) কেন্দ্রীয় সরকারের কোন প্রকার কর কার্য বা আদায়ের ক্ষমতা থাকবে না। প্রদেশ কর আদায় করবে এবং কেন্দ্রীয় খরচ মেটানোর জন্য অর্থ দেবে, (ঘ) কেন্দ্রের হাতে থাকবে শুধু দেশরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয়। ছয়দফা বিষয়ে বঙ্গবন্ধু ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় বলেছিলেন, ‘সাঁকো দিলাম।’ ছয়দফা ছিল স্বায়ত্বশাষনকে স্বাধীনতার সাথে যুক্ত করার সাঁকো। তারপর আগরতলা মামলা, উনসত্তরের গণআন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। সবকিছুরই নায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ছয়দফা অর্জন হলে, পাকিস্তান হত কার্যত; একটি শিথিল কনফেডারেশন। পূর্ববাংলা কেন্দ্রকে কর দেয়া বন্ধ করলেই দেশ স্বাধীন হয়ে যেতো। আক্রান্ত হলে গড়ে তোলা নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী তা প্রতিরোধ করতে পারতো। ছেষট্টি সালেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার বীজ রোপন করেছিলেন ছয়দফার মাধ্যমে। আগরতলা মামলায় সে অভিযোগই ছিল।  উনসত্তরের গণআন্দোলনের ভাষা ছিল, “তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা।” একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ছয়দফা এক দফায় পরিনত হল। যে বঙ্গবন্ধু ছেষট্টি সালে শিথিল কনফেডারেশনের দাবী উত্থাপন করলেন এবং আন্দোলনের মাধ্যমে সেই দাবীকে এগিয়ে নিলেন, ‘তিনি স্বাধীনতা চাননি’-একথা কতবড় মিথ্যাচার, তা সহজেই অনুমেয়। বিষয়টিতে আরো একটু আলোকপাত করা যাক। একাত্তরের ৭ই মার্চের ভাষনে তার কথাগুলো লক্ষনীয়। ‘আমি যদি হুকুম দেবার না পারি, তোমাদের যার যা আছে তাই নিয়ে শক্রর মোকাবিলা করবে,’ ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম,’ ‘দেশকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।’ একথাগুলোর অর্থ কি? স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। দুরাচারেরা বলে, মুক্তিযুদ্ধের আহ্বান না জানিয়ে স্বাধীনতা ঘোষনা করলেন না কেন?  ৭ই মার্চ সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষনা করলে, বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসাবে আখ্যায়িত করা হতো এবং বহিবিশ্বের সমর্থন কমে যেত। কারন বিচ্ছিন্নতাবাদ আর্ন্তজাতিক সমর্থন পায় না। বিচ্ছিন্নতাবাদ নিগেটিভ ও স্বাধীনতা পজিটিভ । সেজন্যই বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিয়ে স্বাধীনতার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ তথা জনযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আমরা প্রথম গুলি ছুড়ব না। আক্রন্ত হলে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো। সেজনেই ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আক্রমনাত্মক গুলি ছোড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বঙ্গবন্ধু স্বকণ্ঠে বেতারের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে ঘোষণা পাকিস্তানী মেজর সালেক নিজ কাজে শুনেছেন বলে উল্লেখ করেছেন তার বইতে। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর পচিশে মার্চের মধ্যরাতের স্বাধীনতার ঘোষনা সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল টেলিযোগযোগ সহ বিভিন্ন মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটিই পরদিন ২৬ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে পাঠ করেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা এম. এ. হান্নান। তারপর সে আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে।

প্রশ্নওঠে, পচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কেন মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড ছিল মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি এবং কিছু বিদেশী শক্তির মিলিত ষড়যন্ত্রের ফল। মুক্তিযুদ্ধ ছিল বিপ্লব আর পচাত্তরের জঘন্য হত্যাকান্ড ছিল সন্ত্রাসী প্রতিবিপ্লব। প্রতিবিপ্লব পশ্চাদমুখী। বিপ্লবকে নস্যাত করে পেছনে ফিরতে চায়। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন যাত্রাকালে, ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ করেছিলেন পাকিস্তানের সাথে শিথিল হলেও একটি রাষ্ট্রাীয় সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য। স্বাধীন বাংলাদেশ তা চায়নি। বঙ্গবন্ধুও চাননি। সেজন্যই পাকিস্তানী আই-এস-আই এর সর্বাত্মক সহায়তায় এ দেশীয় এজেন্টদের দিয়ে নৃশংস হত্যাকান্ড চালান হয়। নেপথ্যে জেনারেল জিয়া আর সামনে মুশতাক। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই কোলকাতায় মুশতাক কনফেডারেশন গঠনের লক্ষ্যে মার্কিন দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ রেখেছিলেন বলে শোনা যেতো। ১৫ আগস্টের হিং¯্র প্রতিবিপ্লব ছিল পাকিস্তানের সাথে পূণঃসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র। এ সম্পর্কের অন্তরায় ছিলেন বঙ্গবন্ধু। শুধু জীবিত বঙ্গবন্ধু নন। মৃত বঙ্গবন্ধুও। এজন্যই হত্যাকান্ডের পর তাঁর চরিত্র হননের প্রয়াস চলতেই থাকে। যারা বঙ্গবন্ধুকে দেখেনি, সেই নতুন প্রজন্মের মন থেকে বঙ্গবন্ধুকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য মিথ্যাচারের পরিকল্পনা। মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে অপসারণ করে এক খলনায়ককে প্রতিস্থাপন করার হাস্যকর প্রয়াস চালিয়েছিল ২০০১ সালের পর ক্ষমতাসীন জামাত-বিএনপি জোট সরকার, যদিও জেনারেল জিয়া নিজেও কোনদিন নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবী করেননি। ২৬ মার্চ দুপুরে এম.এ.হান্নান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষনাপাঠের পরদিন ২৭মার্চ সন্ধ্যায় মেজর জিয়া ঘোষনা পাঠ করেছিলেন। তিনি ঘোষক নন, ঘোষণার অন্যতম পাঠক।

বাংলাদেশ দীর্ঘকাল পর আবার আত্ম-পরিচয়ের পথে ফেরার স্বপ্ন দেখছে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। বাহাত্তরের সংবিধান থেকে পচাত্তরের কালো থাবা মুছে ফেলার প্রচেষ্টায় কিছুটা হলেও অগ্রগতি হয়েছে। পচাত্তরের ঘৃন্য চরিত্রগুলোর মুখোশ উন্মোচনের প্রস্তুতি চলছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের অনেকেই ইহলোক ত্যাগ করেছেন। যারা এখনো বেঁচে আছেন, তাঁদের নাগরিক ও নৈতিক দায়িত্ব, নতুন প্রজন্মের কাছে সাক্ষ্য দেয়া, অকপটে সত্য প্রকাশ করা এবং দুরাচারদের মুখোশ উন্মোচন করা। সে লক্ষ্যেই কিছু কথা লেখা হলো।

Post a Comment

0 Comments

যে দোয়া পড়া সুন্নত কঠিন বিপদ থেকে বাঁচতে