শাকিল আহমেদ
দনিয়া সবুজ কুঁড়ি কচি-কাঁচার মেলার ত্রিশ বছর পূর্তি আমার জন্য গৌরব ও অহংকারের। ত্রিশ বছর অনেক সময়। যেখানে মানুষের গড় আয়ু ষাট বছর। সেখানে ত্রিশ বছর সাফল্যের সঙ্গে অতিক্রম করা কম কথা নয়। আর সেই সফলতার অংশীদারদের আমিও একজন। আমার কাছে মনে হয় দনিয়া মেলা এইতো সেদিন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তখন ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি। হঠাৎ একদিন আমার খুব প্রিয় প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন স্যার, সহকারী প্রধান শিক্ষক লোকমান স্যার, লাবু ভাই, চয়ন ভাই, তপন ভাইসহ অনেকে আমাদের ক্লাসে গিয়ে দনিয়া মেলা প্রতিষ্ঠার কথা বলেন এবং ২৬ মার্চে জাতীয় স্টেডিয়ামে প্যারেড করতে ইচ্ছুক ছাত্রদের বিকালে স্কুল মাঠে উপস্থিত থাকতে বলেন। সেই থেকে দনিয়া মেলার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নিলাম।
আমাদের সময় ছোটদের সংগঠন মানেই কচি-কাঁচার মেলা। তখন ছিল না কম্পিউটার, গেমস, মোবাইল, ট্যাব, আইফোন ইত্যাদি। আমাদের ধ্যান জ্ঞান বলতেই ছিল একমাত্র কচি-কাঁচার মেলা। আমরা যারা কর্মী ছিলাম, বড় ভাইদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তাঁরা যখন যেভাবে নিদের্শনা দিতেন আমরা নিষ্ঠার সঙ্গে সেই কাজ সম্পন্ন করতাম। আমাদেরকে খুঁজতে হতো না, আমরাই বড় ভাইদের খোজ নিয়ে জানতে চাইতাম এরপর কি করবো? আর কি কোন কাজ আছে? কোন কিছুর প্রত্যাশায় নয়, কেবলমাত্র মেলাকে ভালবেসে।
দনিয়া মেলার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় মেলার প্রতিষ্ঠাতা শিশু-সাহিত্যিক ও সাংবাদিক রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই, কবি সুফিয়া কামাল, ‘সওগাত’ সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন, অধ্যাপক ডঃ আব্দুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন, ‘বেগম’ পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগম, খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, শিল্পী রফিকুন্নবী, শিল্পী হাসেম খান, শিল্পী আবুল বারক আলভী , ডঃ এ.টি.এম শামসুল হুদা, ডঃ জাফর ইকবাল, শাসমুজ্জামান খান, কেফায়েত ভাই, মুন্নাভাই, খোকনভাই, আনজাল ভাইসহ আরো অনেকের স¯েœহ সাহচর্য পেয়েছি। দনিয়া মেলার পর আমি আমার গ্রামের বাড়িতে স্বরূপকাঠিতে কচি-কাঁচার মেলার শাখা গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করি এই মেলা বর্তমানে স্বরূপকাঠি সোপান কচি-কাঁচার মেলা নামে সফলভাবে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে আসছে। এরপর ঢাকায় জাপানী বাজার স্বর্ণকলি কচি-কাঁচার মেলা গঠনের উদ্যোগ নেই যা স্কুল ভিত্তিক এবং এখনো কার্যক্রম পালন করছে। বর্তমানে আমি কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার নির্বাহী পরিষদের সদস্য। এর পাশাপাশি মেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছি। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমি মেলার পরিচালক খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি এবং শিখছি। আমি তাঁর কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। বাস্তবতার সঙ্গে কিভাবে সংগ্রাম করে সংগঠন করতে হয় তাও মেলা থেকে শিখেছি। মাতৃভূমি এবং মাতৃভাষার প্রতি আগ্রহ ও ভালবাসা সৃষ্টির মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মধ্যে দেশাত্মবোধ ও আত্ম-সম্মানবোধ জাগরিত হবে কিভাবে তাও জেনেছি। সত্য, ন্যায় ও সুন্দরের সঙ্গে পরিচিত করে শিশু-কিশোরদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার কাজ করছে কচি-কাঁচার মেলা। যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন মেলার সঙ্গেই থাকবো।
মনে পড়ে, আমার খুব প্রিয় প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন স্যার(দনিয়া মেলার পরিচালক ও কেন্দ্রীয় মেলার উপদেষ্টা সদস্য), জনাব জহির আলম (দনিয়া মেলার উপদেষ্টা), বাবুভাই, তপনভাই, মিজান, নিপুকে তাঁরা না ফেরা দেশে পাড়ি দিয়েছেন, তাঁদের স্মরণ করতে চাই শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে। ঐ সময়ে এক সঙ্গে কাজ করেছি আমার বন্ধু তমাল, মিঠু, শরিফ, শামীম, সালাম, বাবু, ফারহাদ, তানভির, শিপন, সোহেল, বেলাল, নাসরিন, শিখা, আরিফা, লুবনা, লাবনী, আইরিন, বকুলসহ অনেকের কথা। অনেকের নাম ভুলে গেছি। বর্তমানে দনিয়া মেলার পরিচালক আজাদ ভাই, ইকবাল ভাই, চায়না আপা, বকুল, সজল, প্লেসহ সকল কর্মী, তরুণ ও প্রবীণ ভাইবোনদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ত্রিশ বছর উদযাপনের জন্য।
0 Comments