Header Ads Widget

Responsive Advertisement

Ticker

6/recent/ticker-posts

নববর্ষে করোনার অর্থনীতি

 নববর্ষে করোনার অর্থনীতি

-খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ



ইংরেজ কবি বর্ষ বিদায় কালে নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে লিখেছেন, Ô Ring out the old, Ring in the new.’ ভাবানুবাদ করলে দাঁড়াবে, “যা গেছে তা যাক, আগত বছরকে স্বাগত! ” ২০২০ সালকে আমরা বিদায় জানিয়েছি। স্বাগত জানাচ্ছি ২০২১ কে। অতীতের দুঃখ কষ্ট- গøাণি মুছে ফেলে সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে নতুন খ্রীষ্ট বর্ষ। বাস্তবে কী ঘটবে, তা আমরা জানি না। বিদায়ী বছরটি ছিল দুঃখ ভরা। দুঃখের মূলে ছিল করোনার মহামারি। দুঃখের ব্যপ্তি ছিল সাধারন মানুষের আর্থিক দুরবস্থা। দুঃখে যাদের জীবন গড়া, তাদের আবার দুঃখ কিসের- সে কথা তো ঠিক। কিন্তু করোনাপূর্ব অভাব অনটন বছর ব্যপী বৃদ্ধি পেয়ে সাধারন মানুষকে সম্বলহীন করে তুলেছে। করোনাপূর্ব কালে বাংলাদেশে দাড়িদ্রে হার ছিল ২০%। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থার সমীক্ষায় এই হার বিদায়ী বছরের অক্টোবর অন্তে এসে দাড়িয়েছে ৩৯%। জাতিসংঘের সহসংস্থার হিসেবেও এর সত্যতা মেলে। দারিদ্রের হার দ্বিগুন হয়েছে করোনার আঘাতে। সরকার সব সময় জিডিপির হার নিয়ে অর্থনীতিতে স্বস্তির কথা বলে। এই স্বস্তি জনসাধারনের স্বস্তি নয়, বরং নাগরিকদের শতকরা মাত্র পাঁচ ভাগ মানুষের উল্লস্ফন। শতকরা ৫% মানুষের উল্লস্ফনে নাভিশ্বাস উঠেছে শতকরা ৯৫% নাগরিকের। একে দেশের বা জনগনের উন্নয়ন বলা যায় না। সকল নাগরিকই সংবিধান মতে রাষ্ট্রের মালিক। সেখানে অধিকাংশ নাগরিককে দারিদ্র এবং চরম বৈষম্যের শিকার বানিয়ে এবং গুটি কয়েক পরিবারকে ধনিক বানিয়ে শোষক শ্রেনীতে রূপান্তরিত করা উন্নয়নের পরিচায়ক নয়। বাংলাদেশ সরকারের প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৮ সালে আয় বৈষম্য নির্ধারক জিনি সহগ ছিল .৪৮৫ (দশমিক চার আট পাঁচ)। উল্লেখ্য, সহনযোগ্য আয় বৈষম্যর দেশে জিনি সহগ রয়েছে .৩ থেকে .৩৫ পর্যন্ত। সুইডেন ডেনর্মাক নরওয়েসহ বেশকয়েকটি ইউরোপীদেশ এর উদাহরণ। বলাই যায়, আয় বৈষম্যের বিচারে জিনি সহগ দশমিক পাঁচের কাছাকাছি পৌছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের চরম বৈষম্যের অল্প কয়েকটি দেশের অন্যতম এবং এতদন্বলে সর্বাধিক বৈষম্যের দেশ।দারিদ্রের হার প্রায় দ্বিগুন হওয়ার জন্য, ২০২০ সালেই আয়- বৈষম্য দশমিক পাঁচ অতিক্রম করেছে বলে ধারনা করা যায়। কষ্টদায়ক চমকপ্রদ খবর বেরিয়েছিল ২০১৯ সালে। সারা বিশ্বে বিলিওনিয়ার ব্যক্তির সংখ্যাবৃদ্ধির হার বাংলাদেশে সর্বাধিক। দ্বিতীয় স্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর তৃতীয় স্থানে চীন। সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের পেটে লাথি মেরে শতকরা পাঁচজনকে সম্পদশালী করে তাদেরকে ক্ষমতার খলনায়ক বানানোর নাম কি উন্ন্য়ন? ২০১৮ সালের পর থেকে দেশের রাজনৈতিক সরকারকে শিখন্ডি রেখে অর্থনৈতিক সুবিধা ক্রমাগত কেড়ে নিচ্ছে এই নব্য দুষ্ট চক্র। করোনার সাবসিডাইজড ঋণ প্রধানত তারাই ভাগযোগ করে নিয়েছে মর্মে সম্প্রতি সংবাদপত্রে রিপোর্ট বেরিয়েছে। এই সহায়তা ছোটদের জন্য বরাদ্দ থাকলে ও কপাল খুলছে না। (ক) ২% ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ব্যাংকের কুঋণকে সুঋণে পরিনত করা, (খ) সুদের হার নয়- ছয় করা, (গ) করোনার দোহাই দিয়ে ২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত ঋণশ্রেণীবিন্যাস ঠেকিয়ে রাখা, (ঘ) একই পরিবার থেকে দু’জনের স্থলে চারজন ব্যাংক পরিচালক নিয়োগের আইন করা; (ঙ) ঐ আইন পাশ করার পরও একটি ব্যাংকে এই পরিবার থেকে চারজনের অধিক পরিচালক থাকা স্বত্বেও  ব্যবস্থা গ্রহন না করা সহ ইত্যাকার আরো অনেক কাজ করিয়ে ধনিক গোষ্ঠিটি তাদের আধিপত্য বর্ধন করে চলেছে। এইসব গনবিরোধী কাজকর্মে রাজনৈতিক সরকার কি অসহায়? বিষয়টি ২০২১ সালে জনসাধারন্যে পরিষ্কার হতে শুরু করবে।


ফিরে আসা যাক করোনার আলোচনায়। চোখে দেখা যায় না, এমন ছোট্ট একটা পোকা, সৃষ্টির সেরা মানবজাতিকে যেভাবে বোকা বানিয়ে রেখেছে, তা অনুধাবনযোগ্য। শাসকবর্গ এবং পন্ডিত ব্যক্তিবর্গের ধ্যান-ধারনা WHO বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ঘিরে। হু বলেছে ‘মাস্কেই সমাধান’। বাংলাদেশে বিজ্ঞজন ও সমস্বরে বলছে আলবৎ। চোখের সামনে আমরা  দেখলাম মাস্ক পরানোর প্রানান্ত অভিযান। জরিমানা হলো, জেল হলো। আরো কঠোর হবার কথাবর্তাও শোনা গেল। কিন্তু জনগনের নাক-মুখ ঢাকা গেল না। হ্যাঁ মাস্ক বিক্রি বেড়েছে। লোকে পুলিশের ভয়ে কিনে পকেটে রেখে দেয়। মানুষ এখন দু’ ভাগে বিভক্ত। উচ্চশ্রেনী একটির ওপর আরোকটি মাস্ক পরছেন। স্বেচ্ছাবন্দীর মত ঘরে থাকছেন। সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখছেন। সাধারন মানুষেরা এসবের ধার ধারেন না। তারা মাস্ক পরেন না। দুরত্বের পরিবর্তে নৈকট্য বজায় রাখে। ঘরে বসে থাকলে খাওয়াবে কে? তাই সারাদিন কাজে নিয়োজিত। করোনার  আধিক্য উচ্চশ্রেণীর সাথে। বস্তিতে করোনা নেই। ক্ষেত খামারে করোনা নেই। হাট বাজারে করোনা নেই। ব্যাপারটা কী? মূল ব্যাপারটা হলো ‘ইমিউনিটি’ বা করোনা প্রতিরোধক শক্তি। খেটে খাওয়া মানুষের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বেশি। উচ্চশ্রেণীর মানুষের শরীরে মেদ অধিক্য থাকতে পারে; প্রতিরোধক শক্তি কম। আয়েশি উচ্চশ্রেণীর মানুষের শরীরে করোনা একবার ঢুকতে পারলে, তাকে নাজেহাল করে ছাড়ে। খেটে খাওয়া মানুষের শরীরে করোনা ঢুকলে, জীবাণুটি হজম হয়ে নিঃশেষ হয়ে যায়।
পরিসংখ্যান দিয়ে কথা বলা যাক। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধণী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অর্থাভাব নাই। খাদ্যাভাব নাই। পরিশ্রমের কাজগুলো অভিবাসীরা করে। মার্কিনীরা করে আয়াসের কাজ। তাছাড়া আরাম- আয়াশের সব ব্যবস্থাই সেখানে রয়েছে। করোনার আক্রমন সেখানেই শীর্ষে। করোনা তাদের ধরছে আর মারছে। আক্রান্ত হচ্ছে অনেক। আক্রান্তের মধ্যে শতকরা ১০/১২ জনের মৃত্যু ঘটছে।তুলনা করুন গরীব বাংলাদেশের  সাথে। আক্রান্ত ও কম, মৃত্যু আরো কম। যুক্তরাষ্ট্রের ১২% মৃত্যুর বিপরীত বাংলাদেশে মৃত্যুর হার আক্রান্তের ১.৪৩%। অর্থাৎ দেড় জনের ও কম।











তাহলে সরকার ও উচ্চমহল সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় ঢেউ এর কথা উচ্চস্বরে বলছেন কেন? কারন তারা জনবিচ্ছিন্ন। তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কথা শুনছে এবং বেদবাক্য মনে করছে। দৃষ্টিটা বাংলাদেশের প্রতি ফেরান। জনগনের দিকে তাকান। ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে এই লেখাটা লিখেছি। এরি মধ্যে দু’টি স্বল্পকালিন শৈত্যপ্রবাহ প্রবাহিত হয়েছে। করোনার সেকেন্ড ওয়েভের বিন্দুমাত্র চিহ্ন কোথাও নাই । এই সপ্তাহে প্রতিদিন আক্রান্তের হার কমছে। মৃত্যু হার নি¤œ পর্যায়ে। আক্রান্তের হার দিনে হাজারের নিচে নেমে গেছে। উচ্চমহল এখন বলেছেন, নতুন বছরের জানুয়ারীর শেষে বা ফেব্রæয়ারীর প্রথমে দ্বিতীয় ঢেউ আসবে। প্রথম ভাবলাম, কোন জ্যোর্তিবিদ বলেছেন নাকি? খুজতে খুজতে পেয়ে গেলাম । জ্যোতির্বিদ নন। ভবিষ্যৎ বাণীটি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ইউরোপ- আমেরিকা স্টাডি করেই হয়ত কথা বলেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কথা অমৃত সমান। আমাদের বিজ্ঞজনেরা সেকথাই আওড়ালেন। সেকেন্ড ওয়েভ আসবে না, এমন কথাতো বলতে পারি না। তবে তেমন কোন আলামত নেই। আলামত রয়েছে করোনা সংকোচনের। সাবধানতা ভাল। কিন্তু অহেতুক ভীতি ছড়ানো নিস্প্রয়োজন। 


মান্যজনেরা কিন্তু অহেতুক কথা বলেন নি। হেতু আছে বৈকি! তবে হেতুতা করোনা নয়। করোনার জুজু দেখিয়ে আবার কিছু টাকা হাতিয়ে নেয়া যায় কিনা। এটি হলো করোনার অর্থনীতি! করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এর ‘ আশঙ্কা ’ প্রকাশ করে আবার কিছু অর্থের বরাদ্দ রাখার কথা বলা হচ্ছে। প্রথম বরাদ্দের টাকার সিংহ ভাগ  যে শীর্ষ চক্রটি পেয়েছে, তারাই তাথাকথিত দ্বিতীয় ঢেউ এর প্রলাপ বকে দ্বিতীয় ধাপের বরাদ্দটি করিয়ে নিতে চাইছেন। সরকারের ভেতরের সরকার তো তারাই। পেরেও যেতে পারে। একবার বরাদ্দটা করাতে পারলে, সেকেন্ড ওয়েভ আসুক আর না আসুক, টাকার ভাগ-বাটোয়ারা করে ফেলা যাবে।


করোনার অর্থনীতির ভাগ- বাটোয়ারার দিকটা তুলে ধরা হলো। এটি ঠেকানো প্রয়োজন। এনাফ ইজ এনাফ! ভাগ বাটোয়ারা বন্ধ করে নজর দিতে হবে যারা নিঃস্ব হয়েছে, তাদের পুনরুদ্ধারে। করোনার আগে নিঃস্ব ছিল ২০% নাগরিক। বছর শেষে নিঃস্বের সংখ্যা ৩৯% এ দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ শুধুমাত্র করোনার কারনে ১৯% মানুষ নিঃস্ব হয়েছে। এরাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ। এই ১৯% নিঃস্ব  মানুষের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে নতুন বছরে। সেই সাথে পূর্বেকার ২০% দরিদ্র এখন হতদরিদ্রে পরিনত হয়েছে। তাদেরকে অতিদরিদ্রের অবস্থা থেকে মুক্ত করতে হবে।


২০২১ সালে ২০% নাগরিককে অতিদারিদ্রের কষাঘাত থেকে মুক্ত করা এবং আরো ১৯% নাগরিকের দারিদ্রবসস্থা থেকে উদ্ধার করার নীতিগত অবস্থান হবে করোনার অর্থনীতি। বাস্তবায়নের কর্মকান্ড হবে ২০২১ সালের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। তবে বছরের প্রথমেই নিয়ত ঠিক করতে হবে। সরকারের লক্ষ্য কি কমবেশী ৪০% নাগরিকের দিকে থাকবে, নাকি ধণী চক্রের ৫% ভাগ্যবানের মেদ বৃদ্ধির দিকে থাকবে। সরকার দোদুল্যমান থাকবে, নাকি জনস্বার্থে লক্ষ্য নিদিষ্ট করতে পারবে, এর উপর নির্ভর করবে নতুন বছরের করোনার অর্থনীতি ।


করোনার কল্যানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ধণীদের ধণসম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে। দরিদ্র আরো দরিদ্র হয়েছে। এই হলো ক্রনিক্যাপিটালিজম বা চরম পুঁজিবাদের ফসল। বাংলাদেশ তো বঙ্গবন্ধুর ‘কল্যাণ অর্থনীতি’ বির্সজন দিয়ে এখন চরম পুঁজিবাদের পুজারী সেজেছে। এখানেও করোনার কল্যানে শীর্ষ ধণীরা আরো ধণবান হচ্ছেন এবং হবেন। কঙ্কালসার হতে  থাকবেন দারিদ্রগোষ্টি। সরকার কি নতুন বছরে ধনিক শ্রেনীকে আরো সুবিধাদি প্রদান থেকে বিরত থেকে জনগনের পাশে দাঁড়াতে সক্ষম হবেন? প্রশ্নবোধক চিহ্নটাই থাকুক। নতুন বছরের প্রতিটি দিন এ প্রশ্নের জবাব দিয়ে যাবে।













Post a Comment

0 Comments

যে দোয়া পড়া সুন্নত কঠিন বিপদ থেকে বাঁচতে