খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ: তাঁকে যেমন দেখেছি
এটিএম শামসুল হুদা
বিশিষ্ট ব্যাংকার, চিন্তাবিদ, সংস্কারক ও সংগঠক খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের বিস্তীর্ণ কর্মজীবন দুটি সম্পূরক কর্ম-পরিম-ল জুড়ে ব্যাপৃত ছিল। তাঁর প্রথম ও প্রধান কর্ম-পরিম-লটির ধারক ছিল বাংলাদেশের বিকাশমান আর্থিক খাত যা বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল প্রাণবিন্দু। এই গুরুত্বপূর্ণ খাতের প্রারম্ভিক থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের নীতি নির্ধারণী পদে অত্যন্ত সফলতার সাথে তাঁর দায়িত্ব পালন করে তিনি একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
বাংলাদেশের আর্থিক খাতে কোন নিষ্ঠাবান কর্মীর অভিযাত্রা আদৌ সহজ নয়। বিভিন্ন পর্যায়ে অনাকাক্সিক্ষত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং বিত্তবান সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের দুরাচার ও প্রতিপত্তির মুখে আর্থিক খাতের নিয়ম- শৃঙ্খলা, রীতি-নীতি ও স্বাভাবিক দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা অনেক সময় হুমকির মুখে পড়ে। সরকারি খাত- যেখানে ইব্রাহিম খালেদ তাঁর কর্মজীবনের সিংহভাগ সময় অতিবাহিত করে গেছেন, সেখানে বেসরকারি খাতেরতুলনায় এ হেন অরাজক পরিস্থিতির মাত্রা অনেক বেশি।
এতসব বৈর উপেক্ষা করে খালেদ অত্যন্ত নিষ্ঠা, দক্ষতা ও সততার সাথে তাঁর দায়িত্ব পালন করে ব্যাংক পরিচালনা ক্ষেত্রে অনুকরণীয় এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। তাঁর স্পষ্টবাদিতা ও সততার কারণে কর্মজীবনে তাঁকে বহুবার চরম দুর্ভোগ আর বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু কোন ধরনের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে তিনি তাঁর লক্ষ্যে অটুট ছিলেন। যখনই তিনি কোন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেনÑতার হাতিয়ার ছিল নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে যেকোন মূল্যে সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা। এ হেন কঠিন অবস্থানের কারণে তিনি বহু ক্ষমতাবান ও প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তির বিরাগভাজন হয়েছেন এবং এ-জন্য কখনও কখনও তাঁকে অনেক বেশি মূল্য দিতে হয়েছে।
তবে আশার কথা এই যে, যে কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ যাঁরা এটিকে নিয়ন্ত্রণ করেন কিংবা নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করেন তাঁদের অধিকাংশই যে সংগঠনের স্বার্থ বলি দিয়ে নিজের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে তৎপর, তা কিন্তু নয়। সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকেই সংগঠনের স্বার্থ ও মঙ্গল বিবেচনা করে তাঁদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এ ধরনের দ্বৈততা সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্যের সৃষ্টি করে যা অনেক ভাল উদ্যোগ ও কর্ম-পরিচালনা বাস্তবায়নে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করে। ইব্রাহিম খালেদ তাঁর কর্মজীবনে সর্বক্ষেত্রেই যে বৈরিতার সম্মুখীন হয়েছেন তা নয়; অনেক ক্ষেত্রে সাংগঠনিক ভারসাম্যের কারণে তিনি অনেক সাফল্যও অর্জন করেছেন।
১৯৬৩ সালে অফিসার পদে অগ্রণী ব্যাংকে কর্মজীবন শুরু করে ২০০৬ সালে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে বিদায় পর্যন্ত দীর্ঘ চার দশকের অধিককাল পর্যন্ত ইব্রাহিম খালেদ ব্যাংকিং খাতে নিরলস কাজ করে গেছেন। তাঁর চাকুরিপঞ্জি পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে, এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তাঁকে ১৯৯৬ সালে অগ্রণী ব্যাংক ও ১৯৯৭ সালে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। ব্যাংকিং খাতের চিরাচারিত নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে একটি ব্যাংকে নূন্যতম তিন বছরের চাকুরির মেয়াদ গণনা করা হয়ে থাকে। সাধারণত অধিকতর কোন গুরুত্বপূর্ণ পদ কিংবা কোন গুরুতর অভিযোগের মুখে এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটতে পারে। ইব্রাহিম খালেদের ক্ষেত্রে তাঁর স্পষ্টবাদিতা ও নিয়ম-নীতির কঠোর পরিপালনে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁর বিরোধের কারণেই এটা ঘটেছে বলে মনে হয়। তবে অগ্রণী-সোনালীর তিক্ত অভিজ্ঞতার অব্যবহিত পূর্বে ১৯৯৪-৯৫ সময়কালে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ১৯৯৮-২০০০ সময়কালে বাংলাদেশ ব্যাংকে ডেপুটি গর্ভনর এবং সর্বশেষ ২০০০-২০০৬ সময়কাল পর্যন্ত পূবালী ব্যাংকের সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করে তিনি এই খাতে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বাক্ষর রেখে গেছেন।
১৯৯৪ সালে তিনবছর কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালনের পর আমি অর্থ মন্ত্রণালয়ের নবসৃষ্ট ব্যাংকিং বিভাগের সচিব হিশাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হই। ঘটনাক্রমে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিশাবে আমার স্থলাভিষিক্ত হলেন। কৃষি ব্যাংক ব্যাংকিং বিভাগের আওতাভুক্ত হওয়ায় ইব্রাহিম খালেদ তথা কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে আমার সংযোগ অব্যাহত থাকে। কৃষি ব্যাংকে অবস্থানকালে খালেদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ যে আরও গভীর হল তাই নয়, আমার সময়ে গৃহীত অনেক কার্যক্রমকে আরও উন্নত ও বর্দ্ধিত কলেবরে অব্যাহত রেখে খালেদ আমার জন্য এক তৃপ্তিদায়ক পরিবেশের সৃষ্টি করেছিলেন। এ সময়ের কার্যক্রমের মধ্যে মাঠ পর্যায়ে ‘গ্রাহক সমাবেশ’ শীর্ষক একটি প্রোগ্রামের আওতায় ব্যাংক কর্মকর্তাগণ কর্তৃক সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের সরাসরি কৃষিঋণ প্রদান ও আদায় ঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি নূতন মাত্রা যোগ করেছিল। এই প্রক্রিয়াতে গ্রাহকদের হয়রানি ও কর্মচারীদের দুর্নীতি অনেকটাই কমে আসায় সাধারণ ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাগণ সন্তুষ্ট ছিলেন আর ব্যাংকের কর্মপরিচালনায়ও যথেষ্ট গতিবেগসঞ্চারিত হয়েছিল।
স্বাধীনতার পর সরকারি খাতের ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মচারী ইউনিয়নের অপতৎপরতা, অযাচিত হস্তক্ষেপ ও দুর্নীতি সুষ্ঠু ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি বিরাট অন্তরায় ছিল। এদের কার্যক্রমকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের উপর ব্যাংক পরিচালনার সাফল্য কিছুটা নির্ভরশীল ছিল। আমার সময় ইউনিয়নের কর্মকা-ের বিরুদ্ধে তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর কঠোর অবস্থান এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃক নানা কৌশল অবলম্বনের ফলে তাদের উপদ্রব অনেকটাই স্তিমিত ছিল।
কৃষি ব্যাংক থেকে আমার প্রস্থানের পর পর পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে আবার ইউনিয়ন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ইব্রাহিম খালেদ যে আমার চাইতেও কঠোর ও নীতিনিষ্ঠ তা ইউনিয়ন আন্দাজ করতে না পেরে ব্যাংকের বিভিন্ন জেলা ও শাখা পর্যায়ে নানা অপতৎপরতা শুরু করে। অচিরেই এই অবস্থা একটা হিং¯্র রূপ পরিগ্রহ করে এবং কৃষি ব্যাংকের পরিচালনা ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়ে। ইব্রাহিম খালেদের অনমনীয় মনোভাব ও নিয়ম-নীতি কঠোরভাবে অনুসরণের ফলে ব্যাংক এ যাত্রা একটা বিরাট সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়।
এ প্রসঙ্গে কর্মচারী ইউনিয়নের ক্ষমতার জাল বিস্তার ও প্রয়োগের নব নব পন্থা বিষয়ে কিছুটা আলোকপাতের জন্য সমকালীন একটি ঘটনার উল্লেখ যথার্থ হবে বলে মনে করি। ঘটনার উৎসস্থল বরিশাল জেলার কয়েকটি উপজেলার ব্যাংক শাখা। ওই সব শাখার কতিপয় অসাধু কর্মচারীরহস্তক্ষেপে শাখাসমূহের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় গুরুতর অনিয়ম ও অসংগতি প্রমাণিত হলে বরিশাল বিভাগীয় অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) তাঁদের চাকুির থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা রুজু করেন। এতে কর্মচারী ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীগণ ক্ষিপ্ত হন এবং ডিজিএমকে সমস্ত মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিতে থাকেন। ডিজিএম তাঁর অবস্থানে অনড় থেকে ওই সমস্ত আদেশ প্রত্যাহারে অপরাগতা প্রকাশ করেন। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন নেতারা এক হয়ে ডিজিএমকে এত নির্মমভাবে প্রহার করেন যে, তিনি রক্তাক্ত কলেবরে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আঘাতের মাত্রা এতই তীব্র ছিল যে, ওই কর্মকর্তা দুইদিন অজ্ঞান অবস্থায় মাসাধিক কাল হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
ইব্রাহিম খালেদের নির্দেশে ডিজিএম এই দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে আদালতে খুনের মামলা দায়ের করেন। সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন ধরনের চাপ ও হুমকির মুখেও খালেদ এই মামলাটি প্রত্যাহারে তাঁর অপারগতা প্রকাশ করেন। সে সময়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান পদে বরিশালের একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ সমাসীন ছিলেন। ব্যাংক কর্মচারী ইউনিয়নের প্রভাব এতটাই সুদূরপ্রসারী ছিল যে, মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্থান থেকে টেলিফোনে আমরা অনুরোধ পাই। খালেদের অনমনীয় মনোভাবের কারণে মামলটি নিয়মমাফিক পরিচালিত হয় এবং মামলার রায় অনুযায়ী ব্যবস্থা গৃহীত হয়।
ব্যাংকিং খাতের উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্নঅবস্থান থেকে ইব্রাহিম খালেদ শুধু প্রতিষ্ঠানের রীতি-নীতি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজেই তাঁর পুরোটা সময় ব্যয় করেননি। খাত-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উদ্ভাবন ও সৃজনশীল প্রক্রিয়াতেও তিনি দৃশ্যমান অবদান রেখে গেছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনিই প্রথম ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যিনি অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালনার জন্য একটি গধহঁধষ ড়ভ ওহংঃৎঁপঃরড়হ-এর সম্পাদনা শেষ করেন। ১৯৮২ সালে তিনি ব্যাংকিং খাতে চবৎভড়ৎসধহপব ইঁফমবঃরহম- এর সূচনা করেন।১৯৯১ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক আর্থিক খাতের সামগ্রিক উন্নয়নের উপর গঠিত টাস্ক ফোর্সের তিনি অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন। একইভাবে, পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের জেনারেল ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত অবস্থায় খালেদ একটি ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূিচর রূপরেখা প্রণয়ন করেন; যা দেশে বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। তবে আর্থিক খাতের অতি প্রভাবশালী ও বৃহৎ সোনালী ব্যাংকের মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের সিংহভাগ আদায় করে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি এবং পরবর্তীতে পূবালী ব্যাংকে বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে একটি লোকসান বহনকারী প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর তাঁর কৃতিত্ব ও সফলতার স্বাক্ষর বহন করে।
আর্থিক খাতের পরিম-লের বাইরে গতানুগতিক রুটিন কর্মকা-ের সীমানা পেরিয়ে বিভিন্ন সৃজনশীল ও গঠনমূলক কাজের মাধ্যমে তিনি আর একটি পরিম-লে তাঁর জ্ঞানকে জাগ্রত করতে চেয়েছেন। এই প্রক্রিয়াতে কোন পার্থিব প্রাপ্তি তাঁর লক্ষ্য ছিল না। মনের মধ্যে ভীড় করা সূক্ষ্ম ভাবনা ও অনুভূতিগুলোর বিকাশ ঘটিয়ে পরিতৃপ্ত বোধ করাই বোধ হয় ইব্রাহিম খালেদের কাম্য ছিল।
চাকুরিবৃত্তের বাইরে অন্য পরিম-লটির প্রতি তাঁর আগ্রহ চাকুিরতে অবস্থানকালেও তাঁকে অনেক পেশাদার ও সৃজনশীল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনে উদ্ভুদ্ধ করেছে। খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ এমবিএ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, বাংলাদেশ ইকোনমিক অ্যাসোশিয়েসনের কোষাধ্যক্ষ ও সহসভাপতি, বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ট্রেনিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং বাংলাদেশ প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট- এর সহসভাপতি পদে সেবা প্রদান করে গেছেন। বহুবিধ প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ও উন্নয়নের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স ও বাংলা একাডেমি থেকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করা হয়।
তবে এ-সব প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বে তাঁর সবচাইতে বেশি আগ্রহ ও ভালোবাসার প্রতিষ্ঠান ছিল প্রিয় কচি-কাঁচার মেলা। ১৯৫৬ সালে মেলার জন্মলগ্ন থেকে সদস্য ইব্রাহিম খালেদ পর্যায়ক্রমে ১৯৫৭-৫৯ পর্যন্ত মেলার শিশু আহ্বায়ক এবং মেলার প্রতিষ্ঠাতা দাদাভাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার পরিচালক এবং নির্বাহী পরিষদের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
স্বাধীনতার পর ইব্রাহিম খালেদ ঢাকায় চাকুিরকালীন কচি-কাঁচা মেলার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক দাদাভাইয়ের অনুপ্রেরণা ও দিক-নির্দেশনায় মেলার বিভিন্ন কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করতে থাকেন। তবে মেলার ভবিষ্যৎ নিয়ে দাদাভাইয়ের চিন্তা ছিল আরও মৌলিক ও সুদূরপ্রসারী। মেলার জন্য তিনি একটি নিজস্ব স্থায়ী ঠিকানার সন্ধানে ছিলেন। এ-জন্য তিনি আমাদের মত চাকুরিরত মেলার সদস্য, বিত্তবান ব্যক্তি ও সংস্থার শরণাপন্ন হন। তাঁর এই প্রচেষ্টায় আরও অনেকের মত খালেদও অকপটে তাঁর সময় ও বিভিন্ন মহলে তাঁর পরিচিতি ব্যবহার করে দাদাভাইকে তাঁর লক্ষ্য অর্জনে সর্বাত্মক সাহায্য করেছেন। দাদভাইয়ের সংকল্প ও একাগ্রতা এবং তাঁর কয়েকজন গুণমুগ্ধ অনুসারীদেরসহযোগিতায় দাদাভাই তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হন। মেলার অনুকূলে শুধু যে একখ- মূল্যবান জমির বরাদ্দ পাওয়া গেলÑতাই নয়। বিভিন্ন দাতাসংস্থার অর্থানুকূল্যে কচি কাঁচা ভবন নির্মাণ করে দাদাভাই তাঁর জীবদ্দশাতেই মেলাকে একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে সক্ষম হন।
২০০০ সালে দাদাভাইয়ের প্রয়াণের পর মেলার ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়। ওই সালেই খালেদ দৃঢ় হাতে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং ২০২১ সালে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত দীর্ঘ দুইদশক অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করে মেলাকে তিনি একটি সুদূঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। পরবর্তী প্রজন্মের কেউ এটি পরিচালনার দায়িত্বভারগ্রহণ করে এটিকে এগিয়ে নিয়ে গেলে সেটিই হবে খালেদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নিদর্শন।
* লেখক কচি-কাঁচার মেলার ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সরকারের সচিব।
0 Comments