Header Ads Widget

Responsive Advertisement

Ticker

6/recent/ticker-posts

কচি-কাঁচার অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা


                                                    -খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

১৯৯৬ সালের অক্টোবর মাস। জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা চার দশক পূর্তি উপলক্ষে সাড়ম্বরে ৪০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উৎযাপন করছে। প্রতিষ্ঠা লগ্নের শিশু সদস্যেরা যৌবন পেরিয়ে পৌঢ়ত্বে প্রবেশ করেছে। চল্লিশ বছরের পথ চলার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ে যারা শিশু-সদস্য ছিল, তারাও কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যের উদ্দীপনায় কর্মচঞ্চল। এমন শুভলগ্নে সারাদেশ থেকে মেলার অনেক সদস্য-শুভার্থী জড় হয়েছে ঢাকায়। ঢাকার ৩৭/এ সেগুনবাগিচাস্থ কচি-কাঁচার মেলার নবপ্রতিষ্ঠিত কার্যালয় নির্মান সম্পন্ন হয়নি। নিচতলার মিলনায়তনটি নির্মিত হয়েছে মাত্র। কিন্তু এত মানুষের আসন সংকলন তো মিলনায়তনটিতে হবে না। তাই অনুষ্ঠানের স্থান নির্বাচন করা হলো নিকটস্থ শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে। শিল্পকলার বর্তমান ভবনটি তখনো নির্মিত হয়নি। বেশ লম্বা আধাপাকা একটি অডিটরিয়াম ছিল। সাত শ’এর মত দর্শকের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন সেই অডিটরিয়ামটি ভেঙ্গে বর্তমান আধুনিক বহুতল ভবনটি পরবর্তী কালে নির্মিত হয়েছে।

মেলার ৪০ দশক পূর্তি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ১৯৭৫ সালের সামারিক সন্ত্রাসের পর দীর্ঘ চড়াই উৎরাই পাড়ি দেওয়া বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ছিয়ানব্বই সালেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদে প্রথম নির্বাচিত হয়েছিলেন। নব-নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান অতিথি হিসাবে আমন্ত্রন করা এবং তাঁর পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ গ্রহণ করার কিছু প্রাক-কথা ছিল। এ বিষয়ে আমি কিছু ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছি। কচি-কাঁচার মেলা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক শিশু-কিশোর সংগঠন। বায়ান্ন সালে ভাষা আন্দোলনে বাঙালীর নবলদ্ধ আত্মআবিস্কারের চেতনা বীজ নতুন প্রজন্মের মানসে প্রোথিত করার প্রত্যয় নিয়ে সেসময়ের কয়েকজন অগ্রসর চিন্তার মানুষ এই শিশু-সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির মূলমন্ত্র (motto) ছিল মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমিকে কেন্দ্র করে ত্রিমাত্রিক ভালোবাসা। আত্মভোলা বাঙালী জাতিকে পুনরায় নিজ মাতৃভাষা ও  মাতৃভূমির ভালবাসায় উজ্জ্বীবিত করার প্রেরনাই ছিল এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য। আমরা বাঙালী, বাংলা আমাদের ভাষা, বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি, পঞ্চাশের দশকে বাঙালীর এই নব আত্মোপলদ্ধির রাজনৈতিক ধারক, বাহক ও রূপকার ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আন্দোলন আর কচি-কাঁচার মেলার সামাজিক কিশোর আন্দোলন পাশাপাশি প্রবাহিত হয়েছে। রাজনৈতিক আন্দোলন সমাজকে সচেতন করেছে, সংহত করেছে। একই সাথে সামাজিক আন্দোলনও মূলধারায় রাজনৈতিক আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছে, প্রসারিত করেছে। রাজনৈতিক আর সামাজিক আন্দোলনের দুই প্রবল ¯্রােত ৫২ সালের পর প্রায় দু‘দশক যাবৎ নিজ নিজ ধারায় এবং নিজ নিজ গতিতে প্রবাহিত হবার পর একাত্তরের মুক্তিসাগরে মিলিত হয়। উনসত্তরের উত্তাল আন্দোলন এবং সত্তরের নির্বাচনে একচেটিয়া ম্যান্ডেট অর্জনের পর একাত্তরের ৭ মার্চ বজ্রকণ্ঠে মুক্তির সংগ্রাম তথা স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু। এরই ধারাবাহিকতায় ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষনা প্রদান করেন। তাঁর আহবানে সমগ্র বাঙালী জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কচি-কঁচার মেলার উদ্দীপ্ত শিশু-কিশোরেরাও বাদ যায়নি। সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা কত হাজার শিশু-সদস্য মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছে, সে সমীক্ষা হয়নি। তবে আজকে স্বাধীন বাংলাদেশের সর্ব অঙ্গণে সুপ্রতিষ্ঠিত মানুষের অনেকেই সেদিন কচি-কাঁচার মেলার শিশু-কিশোর সদস্য ছিলেন। সাম্প্রতি পরলোকগত শিরীন বানু মিতিল মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে যশোর রনাঙ্গনে এবং পরে ভারত থেকে আক্রমন পরিচালনায় পুরুষের মত চুল ছেটে প্যান্ট শার্ট পরে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ গ্রহনের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন। ভারতের সে সময়ের আনন্দবাজার পত্রিকায় মেলার এই সদস্যের বীরত্বের সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হওয়ার পর হৈ চৈ পড়ে গিয়েছিল। ভারতের ক্যাম্পে মেলার অনেক শিশু-কিশোর সদস্য স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেছিল। বিজয়ের পর ১৯৭৪ সালে বাঙালীর চেতনার নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত কচি-কাঁচার মেলার শিশু-কিশোদের শিক্ষা-ক্যাম্পে প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছিলেন। তখন তিনি শুধু দেশের প্রধান মন্ত্রীই নন্, তিনি সকল দলীয় রাজনীতির উর্ধে জাতির জনক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী। জাতির জনক এবং কচি-সন্তানদের শেষ সম্মুখ মিলন ছিল সেটি। বঙ্গবন্ধু সেদিন নিরাপত্তা রক্ষীদের ক্যাম্পের বাইরে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন এই শিশু-সন্তানেরাই আমার নিরাপত্তা’। কচি-কাঁচাদের একটি ক্ষুদে নিরাপত্তা দল যেদিন সর্বক্ষন তাঁর সাথে সাথে ছিল। তিনি বক্তৃতা করেছিলেন, ¯েœহ আপ্লুত হয়ে ছোটদের সাথে মিশে গিয়েছিলেন। কথা বলেছিলেন। শিশুদের অনাবিল ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে ফিরে গিয়েছিলেন ক্যাম্প ছেড়ে। বিদায় লগ্নে তাঁর আশিষ মাখা ¯েœহ বিজড়িত ¯িœত হাসিমুখে বারবার শিশুদের পানে ফিরে তাকানা তাকে বুঝি সর্বকালের শিশু-কিশোর হৃদয় পটে আটকে রেখেছে। কিছু কিছু ঘটনা অতীত হয়না। সর্বকালের মানসপটে অক্ষয় হয়ে থাকে। কচি-কাঁচার স্মৃতি এলবামে এটি তেমনি এ কটি অনন্য ও একক ঘটনা। 

বায়ান্নর সম্বিত ফিরে পাওয়া বাঙালী জাতির যে সব আলোকিত মানুষেরা শিশু-কিশোর মানসে আত্ম-পরিচয় প্রোথিত করার প্রত্যয়ে কচি-কাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাদের পুরোধাদের মধ্যে ছিলেন কবি-সুফিয়া কামাল, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই, ড. আব্দুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন, ড. কুদরতে খুদা এবং মোহাম্মদ নসির উদ্দিন সহ  আরো অনেক গুনীজন। ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫৭-১৯৫৯ সাল পর্যন্ত আমি ছিলাম কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার শিশু-আহ্বায়ক (Child Convenor)। বড় যাদের নাম বলা হল, তারা ছিলেন মেলার উপদেষ্টা (Advisor)। রাজনীতি নয়, একটি আবেগ, একটি উপলদ্ধি, একটি ঐতিহ্য চেতনা এবং একটি অহংকারের সূত্রে বঙ্গবন্ধুর সাথে গাথা ছিল কচি-কাঁচার মেলার সম্পর্ক। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে মেলার ৪০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে প্রধান অতিথি হিসাবে আগমন করেন বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা আসবেন। আনন্দ মুখরিত শিল্পকলা চত্বর। নিরাপত্তা রক্ষীরা খুবই তৎপর। হলের সামনে কাউকেই তারা দাঁড়াতে দিচ্ছেন না। অনেক বোঝানো এবং পরিচয় প্রদান করার পর অল্প কয়েকজনকে তারা অতিথিকে স্বাগত জানানোর অনুমতি দিলেন। অভ্যর্থনার সারিতে প্রথমেই দাঁড়ালেন দাদাভাই এবং মুতীভাই। তারপর আমি, মাহবুব তালুকদার ও হাশেম খান। মাননীয় অতিথিকে রিসিভ করা মাত্রই নিরাপত্তা রক্ষীরা ছোঁ মেরে তাঁকে নিয়ে গেল মিলনায়তনের ভেতরে। আমরা পেছনে পেছনে ঢুকলাম। গাড়ী থেকে নেমে আমাদের সামনে আসামাত্রই তিনি স্মিতহাস্যে বলে উঠলেন ‘আমি কিন্তু ছোটবেলায় কচি-কাঁচার সদস্য ছিলাম।’ দাদাভাই সহাস্যে স্বীকৃতি জানালেন।

অনুষ্ঠান শুরু হল। প্রথমে বক্তৃতা পর্ব, তারপর শিশু-কিশোরদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মেলার ঐতিহ্য অনুযায়ী স্বাগত বক্তব্য রেখেছিল একজন শিশু বক্তা। শিশু সংগঠনে শিশুরা স্বাগত জানাবে, শিশুরাই উপস্থাপনা করবে, এটাই মেলার রীতি। এতে করে শিশুরা দক্ষতা অর্জন করে এবং তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুনাবলি বিকশিত হয়। সেদিন শিশু-সদস্যদের পক্ষ থেকে যে শিশুটি স্বাগত বক্তব্য রাখছিল, সম্ভবতঃ তার নাম ছিল নদী। অল্প বয়সের স্কুল পড়–য়া এক কিশোরী। সুস্পস্ট উচ্চারণে সাবলিল ভঙ্গিতে প্রদান করা বক্তব্যে সে শিশু-কিশোরদের পক্ষ থেকে সেদিনের প্রধান অতিথি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনটি দাবী উত্থাপন করেছিল। সে সময় দেশের শিশু-কিশোরদের প্রভাবিত করতো এমন তিনটি বিষয় নিয়ে সে তার দাবীনামা প্রস্তুত করেছিল। দাবীগুলোর গুরুত্ব এবং যৌক্তিকতা শ্রোতাদের অভিভূত করেছিল। বক্তৃতার শুরুতে অতটুকুন এক কিশোরীর বাচনভঙ্গি দেখে প্রধান অতিথির ওষ্ঠদ্বয়ে তরঙ্গায়িত হচ্ছিল সপ্রশংস স্মিত হাসি। প্রধান অতিথি সহ সবাইকে স্বাগত ও  শুভেচ্ছা জানানোর পর নদী দাবীনামা পেশ করা শুরু করলো। শেখ হাসিনার হাসি মিলিয়ে গেলো। কিঞ্চিত গম্ভীর হলেন।

প্রথম দাবীর কথা বলতে গিয়ে শিশু বক্তা একটি ছোট্ট ভূমিকা রাখলো। সে বল্ল, বঙ্গবন্ধু শিশুদের অনেক ¯েœহ করতেন। ১৯৭৪ সালে কচি-কাঁচাদের শিক্ষা-ক্যাম্পে তিনি এসেছিলেন। ছোট শিশুদের মাঝে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বড় শিশু। পঁচাত্তর সালের পনেরই আগস্ট কিছু সন্ত্রাসী দুবৃত্ত আমাদের এই আপনজনকে মেরে ফেলেছে। কিন্তু আমরা তাকে ভুলতে পারি না। তিনি আমাদের স্বাধীন দেশ দিয়েছেন। নদী বলে চল্ল, “তাই শিশু-কিশোরদের পক্ষ থেকে আমি দাবী করছি যে, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ই মার্চ ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসাবে সরকারীভাবে ঘোষণা করা হোক। এদিন আমরা সব শিশুরা মিলে তাঁর জন্মদিন পালন করবো। তাঁর কথা স্মরণ করবো। তাঁকে ভুলতে দেব না।” শেখ হাসিনার নেত্রকোনে বুঝি একটুখানি বাস্প পুঞ্জিভূত হলো। গম্ভীর দেখালো তাঁকে।

এরপর শিশুবক্তা তার দ্বিতীয় দাবী উত্থাপন করলো। সে বলে চল্ল, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি নিশ্চয়ই খবরের কাগজে পড়েছেন, বিগত কয়েকবছর যাবৎ কিছু দালাল বাংলাদেশ থেকে শিশুদের ধরে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে বিক্রি করে দেয় ঘোড়দৌড়ে জকি হিসাবে ব্যবহারে জন্য। উন্মত্ত ঘোড়দৌড়ে অনেক শিশু পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে। আমাদের দাবী, এসব অনৈতিক এবং নির্দয় খেলায় ব্যবহৃত সকল শিশু-কিশোরদের অবিলম্বে ফিরিয়ে আনা হোক। দালালদের শাস্তি দেয়া হোক এবং বাংলাদেশ থেকে শিশু পাচার বন্ধ করা হোক।’ শেখ হাসিনার চেহারায় উৎকণ্ঠার ছাপ দেখা গেলো। দৃঢ়তা ও যেন ফুটে উঠলো।

এরপর শিশুবক্তা উপস্থাপন করলো তৃতীয় দাবী। নদী ক্ষুব্ধ কণ্ঠে দৃঢ়তার সাথে বললো, ‘রাসেল তো আমাদের মত ছোট শিশু ছিল। সে মায়ের কাছে যেতে চেয়েছিল। দুবৃত্তরা তাকে মায়ের কাছে নেবার কথা বলে হত্যা করেছিল। রাসেল তো ছোট ছিল। ওর তো কোন দোষ ছিল না। তাহলে তাকে কেন মেরে ফেলা হল? আমরা সব শিশুরা রাসেল হত্যার বিচার চাই। যেন আর কোনদিন কেউ শিশুদের হত্যা করতে সাহস না পায়।’ এবার আর শেখ হাসিনার ভারাক্রান্ত মন বাধ মানলো না। নিঃশব্দে কয়েকফোটা অশ্রু ঝড়ে পড়লো।

সামান্য আনুষ্ঠানিকতার পর প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে দাঁড়ালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রেখেছিলেন। দীর্ঘ চারদশক যাবৎ শিশু-কিশোর উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাবার জন্য মেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে অভিনন্দন জানালেন। আহ্বান জানালেন কর্মপ্রয়াস অব্যাহত রাখতে। তারপর শিশুবক্তার দাবী নামার উল্লেখ করে ঘোষণা করলেন যে, তিনি তিনটি দাবীই মেনে নিচ্ছেন। ১৭ মার্চ জাতীয় শিশু দিবস ঘোষণা করে তিনি বল্লেন, শিশুদের নিয়ে দিবসটি জাতীয়ভাবে পালিত হবে। দ্বিতীয় দাবী সম্বন্ধে তিনি বলেন, শিশু পাচার বন্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং অবিলম্বে মধ্যপ্রাচ্য ঘোড়দৌড়ে ব্যবহৃত বাঙালী শিশুদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তৃতীয় দাবী অর্থাৎ শেখ রাসেল হত্যার বিচার বিষয়ে বক্তব্য প্রদানের সময় মিলনাতনে বিষন্ন নিরবতা নেমে আসে। তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে, বিচার একদিন হবেই। শিশু রাসেল সকল শিশুর মাঝেই বেঁচে থাকবে।

কর্মজীবনে আমি অনেক দাবীনামা পেশ করতে দেখেছি। দাবী উপস্থাপনের পর সেগুলো পরীক্ষা করা হয়, চুলচেরা বিশ্লেষন করা হয়, আলোচনা হয়, নেগোশিয়েশন হয়। তারপর কোন দাবী মানা হয়।কোনটি আংশিক মানা হয় এবং অধিকাংশই মানা হয় না। জীবনে এই প্রথম দেখলাম, ছোট্ট এক শিশুর উত্থাপিত সবগুলো দাবী রাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি দ্বিধাহীন চিত্তে মেনে নিয়েছেন। কারণ শিশুদের স্বার্থচিন্তা থাকে না। যা সত্য, তাই তারা বলে। সত্যকে না বলার সুযোগ নেই। সত্যকে মানতেই হয়।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চ ‘জাতীয় শিশুদিবস’ হিসাবে পালনের প্রস্তাব বা দাবী যে কচি-কাঁচার মেলার এক শিশু সদস্যের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছিল এবং সেদিনের প্রধানমন্ত্রী মেনে নেয়ার ফলে তাৎক্ষনিক বাস্তবায়িত হয়েছিল, এ তথ্যটি অনেকেরই অজানা। এমন কি সেদিন যারা উপস্থিত ছিলেন, তাদেরও অনেকের স্মৃতি থেকে হয়তো হারিয়ে গিয়েছিল। সেজন্যই ছোট্ট ঘটনাটি উল্লেখ করলাম। ১৯৯৭ সালে ১৭ মার্চ প্রথম সরকারীভাবে জাতীয় শিশুদিবস উদযাপিত হয়েছিল। ঢাকার মূল অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন ‘গণভবনে’। গণভবনের খোলা চত্বরে একটি ষ্টেজ নির্মিত হয়েছিল। বিকেলে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার শিশু-কিশোরদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল সাংস্কৃতিক আনন্দানুষ্ঠান। শিশু শিল্পীদের সাথে মঞ্চে বসেছিলেন দাদাভাই এবং মূতীভাই। আমরা অন্যান্য অতিথিদের সাথে মঞ্চের সামনে বসে উপভোগ করেছিলাম আনন্দানুষ্ঠানটি। মঞ্চের সামনে একটি চাদর বিছিয়ে অনেক শিশু-কিশোরের মাঝখানে বসেছিলেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানের পর বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে প্যাকেট ভর্তি মিষ্টি পরিবেশন করেছিলেন শেখ হাসিনা। পরবর্তী বছরেও কচি-কাঁচার মেলার পরিবেশনায় একইভাবে উদযাপিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন তথা জাতীয় শিশু দিবস। ২০০১ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পালাবদল হওয়ার পর আর সরকারী ভাবে জাতীয় শিশু দিবস পালিত হয়নি কয়েক বছর। তবে কচি-কাঁচার মেলা প্রতিবছর ১৭ মার্চ দিবসটি পালন করে আসছে, এখনও করছে। 

 

Post a Comment

0 Comments

যে দোয়া পড়া সুন্নত কঠিন বিপদ থেকে বাঁচতে