Header Ads Widget

Responsive Advertisement

Ticker

6/recent/ticker-posts

ঋনখেলাপীর সাথে আমানতকারীর স্বার্থ সংঘাত


                                                          -খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

ব্যাংকে মোটাদাগে গুরুত্বপূর্ণ তিন শ্রেণী রয়েছে। (১) আমানতকারী (২) ঋনগ্রহীতা এবং (৩) মালিক বা শেয়ারহোল্ডার। কার ঝুঁকি কতটা, বুঝতে হলে ব্যাংকরে পরিচালন প্রক্রিয়া সম্বন্ধে জনতে হবে। ব্যাংকের মোট বিনিয়োগের কমবেশী ১০% অর্থ মালিক পক্ষ অর্থাৎ শেয়ার হোল্ডারবৃন্দ ‘পরিশোধিত মূলধন’  হিসাবে প্রদান করনে। বাকী ৯০% অর্থ যোগান দেন ব্যাংকের আমানতকারীবৃন্দ। এই হিসাবে আমানতকারীর ষ্টেক থেকে ৯০% এবং মালিকের ষ্টেক মাত্র১০%। একই অর্থে ঋনগ্রহীতার কোন ষ্টেক নাই, তবে চুক্তি মোতাবেক সময়মত ঋন পরিশোধ করা তার দায়িত্ব। এই দায়িত্ব অবহেলা হলে, ব্যাংকের পরিচালন চক্রই থমকে যেতে পারে।

ব্যাংকের সকল ক্ষমতা মালিক পক্ষের হাতে থাকে। শেয়ারহোলন্ডারদের পক্ষ থেকে ‘বোর্ড অব ডিরেক্টরস’ এই ক্ষমতা ভোগ করেন। বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকের কর্মকর্তাবৃন্দ দায়িত্ব পালন করেন। দশভাগ পুঁজি দিয়ে শতভাগ ক্ষমতার অধিকারী মালিকপক্ষ। অন্যদিকে নব্বই ভাগ পুঁজির যোগান দিয়ে আমানকারীদের কোন ক্ষমতা নাই। এমনকি তাঁর আমানত হেফাজত করার কোন ক্ষমতা ও তার নাই। মালিকপক্ষ আমানতের নয়-ছয় করলে এবং তার আমানত ফেরৎ না দিলে হা-হুতাশ করা ছাড়া আর কিছুই তার করার নাই। এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে বিশে^ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্ভব ঘটেছিল। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হলো বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিটি রাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে যথেষ্ট আইনী ক্ষমতা প্রদান করা হয়ে থাকে মালিকপক্ষের ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে আমানতকারীদের রক্ষা করার জন্য এবং আমানতের সুরক্ষা করার জন্য। ক্ষমতাহীন আমানতকারীদের পক্ষ থেকে ক্ষমতাবান হয়ে স্বার্থরক্ষা করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রকৃত পক্ষে ক্ষমতাবান মালিকপক্ষের বিপরিত ক্ষমতাপক্ষ হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক কোয়াসি-জুডিশিয়াল ক্ষমতা সংরক্ষন করে। ব্যাংক কোম্পানী আইন অনুযায়ী ব্যাংকের পরিচালক, চেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাহী সহ যে কোন কর্মকর্তাকে শাস্তি প্রদান করতে পারে, পদ থেকে অপসারন করতে পারে, পুরো পরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে ‘প্রশাসক’ নিয়োগ দিতে পারে। এ কারনে কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্ণর কোন ব্যাংকের মালিকপক্ষ অর্থাৎ পরিচালনা পর্ষদ বা চেয়ারম্যানের সাথে দাবী-দাওয়া বিষয়ক আলোচনা করনে না, এমন কি এক সাথে সভায় বসে থানাপিনা ও করেন না। ঠিক যেমন একজন বিচারক তার বিচারকক্ষ ছাড়া অন্যকোন স্থানে বাদী বা বিবাদী কারো সাথে সাক্ষাৎ করেন না এবং লাঞ্চ-ডিনার করেন না।
ব্যাংক সম্বন্ধে মূল ধারনা প্রদানের পর আজকের আলোচ্য বিষয়ে ফিরে আসা যাক। ঋন খেলাপী এবং আমানতকারীর স্বার্থ বিপরিতমুখী এবং সংঘাতপূর্ণ। কারণ আমানতকারী অর্থ থেকে ঋণ পেয়ে থাকেন ঋনগ্রহীতা। ঋন ফেরৎ না দিলে, আমানতকারীর স্বার্থ বিঘিœত হয়। মালিকপক্ষ তাদের পছন্দমত ব্যক্তি। সংস্থাকে ঋণ মঞ্জুরী দেন বিধায় মালিকপক্ষ ঋনগ্রহীতার সহায়কপক্ষ। কর্মকর্তাবৃন্দ নিরপেক্ষ হলেও তাদের নিয়োগকারী মালিকপক্ষের নিয়ন্ত্রনাধীন। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ আমানতকারীদের একমাত্র অবলম্বন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকারসহ শক্তিশালী (ঋনগ্রহীতারা ও শক্তিশালী) পক্ষের অনৈতিক চাপে ও প্রভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়লে আমনতকারীদের ঝুঁকি বেড়ে যায়, নিরাপত্তা বিঘিœত হয় এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থা ন্যুব্জু হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতির সৃস্টি হয়েছে। অনেকের ধারনা, পেছন থেকে একজন শক্তিশালী বারষ মবহরঁং এর প্রেরণায় মাননীয় অর্থমন্ত্রী খেলাপী বান্ধব যে নীতিমালার বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেছেন, তা আত্মবিধ্বংসি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিধ্বংসি। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, অর্থ মন্ত্রনালয় থেকে বিষয়বস্তু সহ মোটামুটি একটি খসড়া সার্কুলার বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠান হয়েছে ইস্যু করার জন্য। এমন সর্বনাশ কান্ড কোন দেশে ঘটে না। বাংলাদেশেও এর আগে ঘটে নাই। বাংলাদেশ ব্য্ংক এক্ট এর ৭ ধারা অনুযায়ী মনিটরি পলিসি ও ব্যাংক লাইসেন্স সহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শের (নিদের্শ নয়) সুযোগ ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীন সত্বা প্রদানের উদ্দেশ্যে উক্ত ৭নং ধারাটি অবলুপ্ত করা হয়েছে। এখন আইনানুগ ভাগে সরকারের নির্দেশনার সুযোগ নাই। তারপর ও সরকারের ইচ্ছায় ব্যাংক লাইসেন্স ইস্যু করা যাচ্ছে। তবে বিষয়বস্তু নির্ধারন করে সার্কুলার ইস্যুর জন্য অর্থমন্ত্রণালয় কর্তৃক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানোর বিষয়টি উভয়ের জন্যই বিব্রতকর। অর্থ মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তার প্রফেশনাল। আমি নিশ্চিত, একাজটি তারা স্বেচ্ছায় করেনি। কর্তার ইচ্ছায় কর্ম।

‘কালেরকণ্ঠ’ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী অর্থমন্ত্রণালয়ের নির্দেশিত যে বিষয়গুলি উঠে এসেছে, সেগুলি বিশ্লেষনের দাবী রাখে। প্রকাশিতব্য ঘোষণার আগে বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপীর সংজ্ঞা পূননির্ধারণ করে সার্কুলার ইস্যু করেছে। ইধংবষ-১১ এর পূর্ণ বাস্তবায়ন করে ইধংবষ-১১১ এর ধারনা ভিত্তিক সারা বিশে^র প্রতিপালিত শ্রেণীবিন্যাস নীতি গ্রহণ করে বাংলাদেশ গ্রহনযোগ্য পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নতি করছে সামনে এগুচ্ছে। ভূতের পা নাকি পেছনে। ভূতের অনুসরনে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রকি পেছন দিকে ‘অগ্রসর’ হয়েছে। শ্রেণীবিন্যাস নীতি গৃহীত হয়েছিল ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। তারপর কত উন্নতি অগ্রগতি হলো। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের দশকব্যাপী অনুসৃত নীতিমালা অবমূল্যায়ন করে সম্প্রতি ফিরে গেছে জামাত-বিএনপি আমলে পশ্চাদপদ শ্রেণীবিন্যাস পদ্ধতিতে, যা এখন বিশে^ অবলুপ্ত। গবেষনায় প্রমানিত হয়েছে, ঋন শৃঙ্খলা কঠোর থাকলে ঋন নিয়মিত থাকে। শিথিল হলে খেলাপী ঋনে পরিনত হয়। তাই ৩ মাস পর্যন্ত অনিয়মিত থাকলে ঋন প্রথম স্তরের খেলাপীতে প্রবেশ করতো।

Post a Comment

0 Comments

যে দোয়া পড়া সুন্নত কঠিন বিপদ থেকে বাঁচতে