সামিহা আবদিন শ্রেয়া
যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা, গৌরি যমুনা বহমান। ততদিন রবে কীর্তি তোমার, শেখ মুজিবুর রহমান। দিকে দিকে আজ অশ্রুগঙ্গা রক্তগঙ্গা বহমান, নাই নাই ভয়; হবে হবে জয়; জয় মুজিবুর রহমান।
বাংলাদেশ! আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। অন্যান্য দেশের মতো এই দেশটি এত সহজে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান পায়নি। আমাদের আজকের এই সোনার বাংলাদেশের উদ্ভব হয়েছে এক অবিসংবাদিত নেতার জন্য। যাঁর জন্য আমরা বাংলাকে, বাঙলা ভাষাকে, বাংলাদেশকে নিজের আপন করে পেয়েছি; স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারছি; স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি; তিনি আর কেউ ননÑ তিনি হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রতিবছরের মতো এ বছরও বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে অর্থাৎ ১৭ মার্চে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলায় পালন করা হয় জাতীয় শিশু দিবস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হৃদয় ছিল শিশুদের জন্য অপরিসীম ¯েœহ ও ভালোবাসার। তাই তাঁর জন্মদিনটি পালন করা হয় জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ছিল আলোচনাপর্ব। আলোচনার শুরুতে সম্মাননীয় প্রধান অতিথিকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন মেলার ছোটবোন নাবা। স্মারক উপহার দেন মেলার ছোটবোন উষসী। প্রথমেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন মেলার সাধারণ সম্পাদক আলপনা চৌধুরী। তিনি তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর কর্ম ও রাজনৈতিক জীবনের অসামান্য গৌরবের কথা তুলে ধরেন।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের সকল অধিকার আন্দোলনেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন সক্রিয়। তাঁর জন্যই আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন দেশ, একটি স্বাধীন পতাকা।” এ ছাড়া তিনি শিশুদের সার্বিক বিকাশের জন্য তাদের শিক্ষার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমে যোগদানের কথা বলেন। এরপর বক্তব্য রাখে অনুষ্ঠানের শিশুবক্তা মেলার ছোট্টবোন রোদেলা। রোদেলা তার বক্তব্যে বলে যে, বঙ্গবন্ধুর একটিমাত্র ডাকে সমগ্র বাংলার মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝঁপিয়ে পড়েছিল; ছিনিয়ে এনেছিল প্রিয় স¦াধীনতাকে। তাই বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনটিকে আমরা নাচে,গানে আনন্দে উদযাপন করি।
এরপর বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার সহ-সভাপতি কবি ও স্থপতি রবিউল হোসাইন। তিনি তাঁর বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানীদের বর্বরতার কথা এবং বঙ্গবন্ধুর অকুতোভয় অবস্থানের কথা তুলে ধরেন।
কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার সভাপতি খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র তখন দুর্ভিক্ষ হয়। দুর্ভিক্ষের সময় অসহায় মানুষদের জন্য তিনি তাঁর ধানের গোলা থেকে সমস্ত ধান নিয়ে তা বিক্রি করে তাদের অন্নের ব্যবস্থা করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর কিশোর হৃদয়ে ছিল মানুষের প্রতি ভালোবাসা। বঙ্গবন্ধু সবসময় আইন মেনে চলতেন। তিনি ছিলেন শান্তিপ্রিয়, কিন্তু কঠোর। মানুষের অকৃত্রিম বিশ্বাস ছিল তাঁর উপর। আর তাই তাঁর একটি ডাকেই গোটা জাতি একত্র হয়েছিল।’
অনুষ্ঠানের আলোচক মেলার সভাপতির বক্তব্য শেষে বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের সভাপতি মেলার ছোট্টবোন আফশা। সে তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর মধুময় বাল্যকালের কথা তুলে ধরে। এরপর বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য বিশিষ্ট কবি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ।
তিনি তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতিবাদ, সততা, নিষ্ঠা ও চাঞ্চল্যময় শৈশবকালের কথা তুলে ধরেন। এ ছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী থেকে বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা কিছু কথা দর্শকশ্রোতাদের উদ্দেশে পড়ে শোনান। তিনি বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী থেকে পড়েন, “আমাকে সকল নেতাই ভালোকর্মী হিসেবে জানতেন। আমি কোন কাজেই না বলতাম না। ছাত্রদের বিপদে-আপদে আমি তাদের পাশে দাঁড়াতাম। আমি বিনা প্রতিবাদে অত্যাচার সহ্য করার লোক নই। আমি নিজেও ভয়ানক প্রকৃতির লোক। অন্যায়,অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার শক্তি খোদা আমাকে দিয়েছেন।”
বক্তব্যের একপর্যায়ে প্রধান অতিথি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাঁর নিজের লেখা দুটি কবিতা আবৃত্তি করে শোনান। এরপর আলোচনা পর্বের শেষে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় পুরস্কারপ্রাপ্ত বনানী রংধনু কচি-কাঁচার মেলার ভাইবোনদের বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জনের জন্য পুরস্কৃত করা হয়। বিজয়ী ভাইবোনদের সাথে ফটোসেশনে অংশগ্রহণ করেন প্রধান অতিথি, আলোচকবৃন্দ, শিশুবক্তা ও শিশু-সভাপতি।
সবশেষে বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার সুরবিতান, নৃত্যবিতান ও কথাবিতানের ভাইবোনেরা এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।
0 Comments