Header Ads Widget

Responsive Advertisement

Ticker

6/recent/ticker-posts

বার্ষিক সাধারণ সভা ২০১৯












সুলতান জুবায়ের উদ্দীন

বিভিন্ন দিক বিবেচনায় কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন বার্ষিক সাধারণ সভা। সভা না বলে আয়োজন বলছি: তার কারণ গুরুগম্ভীর আর বহুমাত্রিক সাংগঠনিক আলোচনা চললেও এদিন মেলায় প্রবীণ, নবীন আর তরুণ কচি-কাঁচা সবার পদচারণায় অদ্ভুত আনন্দমুখর এক পরিবেশ তৈরি হয়। যার গৌরবটা বলে বোঝানো যাবে না।

বার্ষিক সাধারণ সভা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ; কারণ পুরো বছরজুড়ে আমাদের এই মেলার যত আয়োজন, জাতীয় বিভিন্ন দিবসকে ঘিরে মেলার যত পরিকল্পনা, শিশুদের সাংষ্কৃতিক বিকাশের উদ্দেশ্যে মেলার যত উদ্যোগ-সর্বোপরি মেলার সব সাংগঠনিক কর্মকা-ের ও পরিকল্পনার বিচার-বিশ্লেষণ ও অনুমোদন এই সভাতেই দেওয়া হয়। সদস্যরাও বিগত বছরের সাংগঠনিক কর্মযজ্ঞ নিয়ে তাঁদের মতামত এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে তাঁদের ধারণা ব্যক্ত করেন। আর সেই ধারণাগুলোও সংখ্যাগরিষ্ঠ  সমর্থনের ভিত্তিতে গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

এ বছরের সভা অনিবার্য কারণে বছরের শুরুতে না হয়ে কিছুটা বিলম্বে ৮ই মার্চ শুক্রবার বিকেলে ৪টায় কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান শুরু হয় মেলার সুরবিতানের ভাই-বোনদের পরিবেশনার মাধ্যমে। এরপর সভাপতি খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ, যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ ফজলুল হাসান খোকন এরং সাধারণ সম্পাদক আলপনা চৌধুরী, মেলার আহ্বায়ক সুলতান জুবায়ের উদ্দীনকে নিয়ে আসন গ্রহণ করেন।

সভার  শুরুতে বিগত বছরের বার্ষিক সাধারণ সভার কার্যবিবরণী পাঠ করে  শোনায় মেলার আহ্বায়ক সুলতান জুবায়ের উদ্দীন। বিগত বছরজুড়ে মেলার সকল আয়োজন ও কর্মকা- এবং চলতি বছরকে ঘিরে মেলার পরিকল্পনাগুলোকে নিয়ে তৈরি রিপোর্ট পেশ করেন সাধারণ সম্পাদক আলপনা চৌধুরী। সম্পাদকের বক্তব্য শেষে যুগ্ম-কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ ফজলুল হাসান খোকন বিগত বছরজুড়ে মেলার আয়-ব্যয়, জমা-খরচসহ আর্থিক বিবরণ উপস্থাপন করেন। সভাপতি উপস্থিত সদস্যদের উপস্থাপিত রিপোর্টগুলোর উপর এরং মেলার সাংগঠনিক কর্মকা- সম্পর্কে তাঁদের মতামত প্রকাশের আহ্বান জানান।

উপস্থাপিত রিপোর্টগুলো সম্পর্কে মেলার সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. রওশান আরা ফিরোজ প্রোজেক্টরের মাধ্যমে প্রদর্শিত মেলার সচিত্র প্রতিবেদনের প্রশংসা করে বলেন, ‘ছবি কখনও মিথ্যা বলে না। বারো মাস জুড়ে মেলার সাংস্কৃতিক আয়োজনগুলোতে শিশুদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের যে ছবিগুলো দেখা যাচ্ছে-এটাই বর্তমানে কচি-কাঁচার মেলাকে সকল শিশু সংগঠনের মধ্যে অনন্য করে তুলেছে।’

মেলার উপদেষ্টা সদস্য সালাহ উদ্দীন কিছু বানান ও মুদ্রণজনিত ভুল বাদে আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্টগুলো সুলিখিত ও সুপঠিত বলে উল্লেখ করেন। তিনি মেলা কর্তৃক আয়োজিত বাচিক কর্মশালার ভূয়সী প্রশংসা করে এটিকে ভব্যিষতে আরও প্রসারিত আকারে আয়োজনের আহবান জানান। তিনি রন্ধনবিতানেরও প্রশংসা করেন।

সদস্য শাহাদাৎ হোসেন উপস্থাপিত প্রতিবেদনগুলোর প্রশংসা করেন। এ ছাড়াও তিনি জানান যে, উল্লাপাড়া রিমঝিম কচি-কাঁচার মেলার আয়োজনগুলোকে ঘিরে তৈরি কিছু প্রতিবেদন তিনি নিজ দায়িত্বে কেন্দ্রীয় মেলায় পাঠিয়েছেন তবে সেগুলো মেলার ত্রৈ-মাসিক সংযোগপত্রে প্রকাশিত হয়নি। তিনি ব্যাপারটি খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানান।

সদস্য মাকসুদুল হক মতলব সূর্যমুখী কচি-কাঁচার মেলায় কেন্দ্রীয় মেলার পৃষ্ঠপোষকতায় বাচিক কর্মশালা আয়োজনের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

সহ-সভাপতি কবি রুবি রহমান সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্টের প্রশংসা করে বলেন, রিপোর্টটিতে মেলার বছর জুড়ে কর্মযজ্ঞ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। তিনি রিপোর্টে ব্যবহৃত সম্মাননীয় শব্দটি সঠিক কি না তা একটু খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান।

মেলার উপাদেষ্টা সদস্য বদরুল আলম সম্মাননীয় শব্দটির ব্যাকরণগত শুদ্ধতার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন। তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদনটি আরেকটু সময় নিয়ে প্রস্তুত করলে হয়তো কিছু অনাকাক্সিক্ষত ছোটছোট ভুল এড়ানো যেত।’

উপদেষ্টা সদস্য আমিনুর রশীদ উপস্থিত সদস্যদের দ্বারা রিপোর্টের চিহ্নিত ভুলগুলো এখনই সংশোধন না করে খতিয়ে দেখার অভিমত পোষণ করেন।

সদস্য আনিস রহমান বলেন, প্রতিটি সাহিত্যবাসরের আগে একটা প্রেস বিজ্ঞপ্তি যদি দৈনিক পত্রিকাগুলো এবং অন লাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে পাঠানো যায়, তা হলে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়বে।’ তিনি প্রতিবছর বইমেলা থেকে কাকলী পাঠাগারের জন্য বই কেনার এবং তার তথ্য সংরক্ষণ করার আহ্বান জানান। এ ছাড়াও তিনি বার্ষিক সাধারণ সভার পক্ষ থেকে ডাচ বাংলা-ব্যাংককে তাদের অনুদানের জন্য ধন্যবাদ জানানোর আকাক্সক্ষা পোষণ করেন। তিনি আরও বলেন, ‘মেলার শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বিষয় প্রধান এবং বাকিগুলো অপ্রধান (ঝঁনংরফরধৎু) করে ক্লাস পরিচালনা করলে ক্লাসগুলোর মান বৃদ্ধি পাবে।’

এরপর উপদেষ্টা সদস্য সারাহ্ বানু সূচি সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্টের প্রশংসা করে বলেন, ‘মেলার শিশুদের উচ্চতা, ওজনসহ স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা নিয়মিত আয়োজন করা গেলে শিশুরা উপকৃত হবে।’
মেলার উপদেষ্টা সদস্য ফাতেমা সাইফুল বিনু বলেন, ‘মেলার গঠনতন্ত্রের পাঁচটি মূলমন্ত্রের একটি হচ্ছে সমাজসেবা। সাংগঠনিক উদ্যোগের মাধ্যমে যদি মেলার শিশুদের সমাজসেবার ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলা যায় তবে শিশুদের সামাজিক মূল্যবোধ অনেক গুণ বৃদ্ধি পাবে।’

সদস্য ইকবাল হাফিজ বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তকে বিদ্যমান আপত্তিকর ভুল এবং অধিকসংখ্যক পাঠ্যপুস্তক শিশুদের উপর চাপিয়ে দেওয়ায় শিশুরা যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে-সে ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা প্রয়োজন। কোচিং বাণিজ্য এবং অধিক পড়ার চাপ যে শিশুদের সাংস্কৃতিক বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সে বিষয়ে সকলের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’

উপদেষ্টা সদস্য খোন্দাকার মো. আসাদুজ্জামান তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘রিপোর্টগুলো সুলিখিত ও সুপাঠিত হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিশু অধিকারসহ কিছু বিষয় নিয়ে শিশু ও অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত সেমিনারের আয়োজন করা উচিত।

মেলার শিশুসদস্য সানজানা আকন্দ তিউশী মেলায় নৃত্য প্রতিযোগিতা আয়োজনের আহ্বান জানায়।

শিশুসদস্য আদিব কিবরিয়া মৃৎশিল্পের উপর কর্মশালা আয়োজনের প্রস্তাব জানায়। সে মেলায় ফায়ার এলার্ম স্থাপনেরও দাবি জানায়।

সদস্যদের এ সকল প্রস্তাব ও মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে সভাপতি খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ‘ত্রৈমাসিক সংযোগপত্রে উল্লাপাড়া কচি-কাঁচার মেলার প্রতিবেদনগুলো কেন অন্তর্ভূক্ত হয়নি-তা যাচাই করে দেখা হবে। বাচিক কর্মশালা সম্প্রসারণ এবং শাখা মেলাগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এ বছর চেষ্টা করা হবে।’

স¦াস্থ্য-পরীক্ষার বিষয়ে সভাপতি বলেন, ‘সদস্য ডা. সারাহ্ বানু সূচির তত্ত্বাবধানে নিয়মিত শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পূর্বে মেলার শিশুরা স্টেডিয়ামে জাতীয়ভাবে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজে অংশ্রগ্রহণ করলেও বর্তমানে শুধুমাত্র পূর্ণাঙ্গ স্কুল ও কলেজগুলোকে সে সুযোগ দেওয়া হয়।’

তিনি উল্লেখ করেন যে, সাহিত্যবাসর আয়োজন সংক্রান্ত প্রেস রিলিজ পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে। নৃত্য প্রতিযোগিতা ও ফায়ার এলার্ম স্থাপনের প্রস্তাবনা দুটি বিবেচনাধীন আছে।’

এরপর বিবিধ আলোচনাপর্ব শেষে অনুষ্ঠিত হয় নতুন কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠনের উদ্দেশ্যে নির্বাচন। নির্বাচন পরিচালনা করেন ট্রাষ্টিবোর্ডের সদস্য মমিনুল্লাহ পাটোয়ারী বীর উত্তম। নির্বাচনে সকল সদস্যের সমর্থনে সভাপতি হিসেবে খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলপনা চৌধুরী পুননির্বাচিত হন। শিশু আহ্বায়ক নির্বাচিত হন সানজিদা আক্তার এলমা। নির্বাচনশেষে মেলার ভাই-বোনদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং নৈশভোজের ব্যবস্থা করা হয়।

Post a Comment

0 Comments

যে দোয়া পড়া সুন্নত কঠিন বিপদ থেকে বাঁচতে