Header Ads Widget

Responsive Advertisement

Ticker

6/recent/ticker-posts

আনন্দঘন আনন্দমেলা

















                                                              জান্নাতুল আদন
                                          

আনন্দমেলা আমার প্রথমবার না হলেও, এইবার আনন্দমেলার অভিজ্ঞতা ছিল অনেক বেশি। আনন্দমেলা প্রতি একবছর পরপর হয়ে থাকে। আনন্দমেলা বা ট্রেনিং ক্যাম্পে কেন্দ্রীয় মেলাসহ শাখামেলার অসংখ্য ভাই-বোন বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে আসে। টানা তিন থেকে সাতদিন বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের একজন দক্ষ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করা হয়।


২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের ৩, ৪, ৫ তারিখে আনন্দমেলা অনুষ্ঠিত হয়। ২ তারিখ বিকালবেলায় আমি মেলায় যাই। দেখি কেন্দ্রীয় মেলাসহ শাখামেলার অসংখ্য ভাই-বোন মেলায় যোগ দিতে এসেছে। সবাই খুব খুশি; আমিও। আমাদের সকালের মধ্যে তাঁবু ভাগ করে দেওয়া হল। আমাকে দেওয়া হল মুতীভাই তাঁবুতে। আমি আমার তাঁবুতে চলে যাই। এরপর নিচে ডাকা হল সকলের গ্লাস-প্লেট নিতে। আমরা সবাই একসঙ্গে রাতের খাবার খাই। খাওয়া শেষে আবার নিজ নিজ তাঁবুতে চলে যাই। সেখানে শুরু হয় ঘুমাবার প্রস্তুতি। সবাই বিছানায় শুয়ে পড়ি বিপুল আনন্দে; রাতে ঘুম আসছিল না; ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লামÑটেরই পেলাম না।

ঠিক ভোর পাঁচটার সময় বিউগলের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। শীতের মধ্যে ঘুম থেকে উঠতেই ইচ্ছে করছিল না। আমি আবার ঘুমিয়ে পড়ি। শ্রুতি আপুর বকার শব্দ পেয়ে তাড়াতাড়ি উঠে ব্রাশ করে নিচে গেলাম। সবাইকে ব্যায়াম করানো হলো; শিল্পকলা একাডেমীর সামনে বড় রাস্তায় আমরা সবাই একসঙ্গে জগিং করি। এরপর আমাদের সবাইকে গুড় ও ছোলা খেতে দেওয়া হলো। অনেকে খেতে পারছিলো না, কিন্তু পরে সবাই মজা করে খেলো। কিছুক্ষণ প্যারেড করে নাস্তা করলাম। প্রথম দিনটি কেটে গেল লড়িনৃত্য, কাঠিনৃত্য, ড্রামবেল ও ব্রতচারী নৃত্য শিখতে শিখতে।

বাংলাদেশ রেড-ক্রিসেন্ট থেকে কয়েকজন ভাইয়া-আপু এসে আমাদের প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ধারণা দেন। বিকেলবেলা আমরা সবাই মিউজিক্যাল ডিসপ্লে করি। এরমধ্যে সন্ধ্যা হয়ে যায়; আমাদের দেওয়া হয় দুধ ও বাটারবন। আমাদের মা-বাবারা আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। অভিভাবকেরা চলে যাওয়ার পর শুরু হলো বিচিত্রানুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে মেলার ভাই-বোনেরা নাচ, গান ইত্যাদির মাধ্যমে অনুষ্ঠানে অংশ নিলো।

পরের দিন ঠিক পাঁচটায় একইভাবে ডেকে তোলা হল আমাদের। দ্বিতীয় দিনও আমরা প্রথম দিনের মতো বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে কাটাই। শুধু দ্বিতীয় দিনের বিকেলবেলা আমাদের দেখানো হল একটি চলচ্চিত্র; নাম ছিল ঋরহফরহম উড়ৎর। অনেক সুন্দর ও শিক্ষনীয় ছিল চলচ্চিত্রটি। আমরা যথারীতি রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম।


তৃতীয় দিনটি ছিল সমাপনী দিন। সকাল থেকেই আমাদের সকলের মনটা খারাপ। বিকেলবেলা মেলার মাঠে এতোদিন যা শিখেছি তা সকলের সামনে করে দেখালাম। মেলার মিলনায়তনে শুরু হলো আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান। আলোচনায় অংশ নেন মেলার ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য খন্দকার মো. আসাদুজ্জামান, মেলার উপদেষ্টা সদস্য বদরুল আলম, আনন্দমেলার অধ্যক্ষ প্রবীণ সদস্য ফাতিমা সাইফুল বিনু এবং মেলার সভাপতি খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। সমাপনী অনুষ্ঠানে শাখামেলার পক্ষ থেকে সৈকত ও কেন্দ্রীয় মেলায় পক্ষ থেকে নুসাইবা আনন্দ মেলার তাদের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি ব্যক্ত করে। এক এক করে অতিথিবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। যারা প্রশিক্ষণে এবং আচার-আচরণে ভাল করেছে তারা শঙ্খমণি, সঙ্খমণি, মধ্যমণি ও চক্রমণি পদকে ভূষিত হয়। আমি পেয়েছি শঙ্খমণি। বড়রা বলেছেন এটা অনেক বড় পুরস্কার; তাই আমি খুবই আনন্দিত। তবে আনন্দমেলার শেষদিনে সবাইকে বিদায় দিয়ে বাসায় ফিরতে খুব খারাপ লাগছিলো। শাখামেলার বন্ধুদের খুব মিস করি। এই তিনদিন ক্লান্তিকর ছিল বটে, কিন্তু আমাদের আনন্দের কাছে সকল ক্লান্তি পরাজয় মেনেছিল; আনন্দমেলা নামকরণটা যথার্থই হয়েছে।

আসছে ক্যাম্পে আবার দেখা হবে সবার সঙ্গে। আর এর মাঝের সময়ে নিজেদের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় করে আনন্দমেলার শিক্ষাগুলোকে জীবনে কাজে লাগানোর সংকল্পে শেষ হয় এবারের আনন্দের আনন্দমেলা।

Post a Comment

0 Comments

যে দোয়া পড়া সুন্নত কঠিন বিপদ থেকে বাঁচতে