Header Ads Widget

Responsive Advertisement

Ticker

6/recent/ticker-posts

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস



                                                                    ইশরাত জাহান বুশরা

আজ আমরা স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিক। কিন্তু এই স্বাধীনতাকে পাওয়ার জন্য আমাদের দিতে হয়েছে অনেক কিছু। আজ বিশ্বের ময়দানে সুপরিচিত বাংলাদেশের নাগরিকদের একসময় কোনো শিক্ষার সুযোগ দেওয়া হতো না, চাকরির সুযোগ তো পরের কথা। চিন্তা করা যায়, একবছরের শিশু সন্তানসহ পরিবারকে নিয়ে কোনো নারী ১৮ ঘণ্টা শুধু পানি খেয়ে ছোট্ট অন্ধকার বাথরুমে আটকে ছিলেন। ভাবা যায়, কোনো মা নিজের ছেলেকে স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে যেতে দিয়েছিলেনÑ এটা জানা সত্ত্বেও যে সে হয়ত আর কোনদিন ফিরবে না। কল্পনা করা যায়! মাত্র ২৩ বছরে ১২ বছর কারাদ- ভোগ করার পরও দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন দেখতে ভোলেননি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভাবা শক্ত হলেও সত্যি, বিজয়ের দিনে মাত্র ১৮ মিনিটের ভেতর গান লিখে, সুর করে তা গেয়েছেন বাংলার মহান শিল্পীরা। না, আজ আমি কোনো কাল্পনিক গল্প নিয়ে আসিনি। এসেছি ১৯৭১ সালের কথা নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের কথা নিয়ে, পূর্ববাংলার  শোষণের ইতিহাস নিয়ে। মহান স্বাধীনতা দিবস আমাদের এ কথাগুলো মনে করিয়ে দেয়।

মহান স্বাধীনতা দিবসকে উপলক্ষ্য করে শিশুÑকিশোরদের মুক্তিযুদ্ধের কথা শোনানোর জন্য ২৬শে মার্চ কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলায় আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই, মেলার ছোট শিশু-কিশোরেরা একটি গান পরিবেশন করে। তারপরেই, স্বাগত বক্তব্য দিতে আসেন মেলার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নিশাত শারমিন নিশি। তিনি বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দেওয়া বাংলার  জনতাকে আগ্নেয়গিরির স্ফুলিঙ্গর সাথে তুলনা করেছেন। তিনি বাংলাদেশের কিছু সফলতা ও কয়েকটি ব্যর্থতা তুলে ধরেন।

নিশাত শারমিন নিশি বক্তব্যে ভালো শিক্ষা ব্যবস্থা, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ এবং নিরাপদ সড়ক দাবি করেন। তিনি ১ম, ২য় ও ৩য় শ্রেণীর পরীক্ষা বাতিল করার ঘোষণা দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশকে স্বশিক্ষিত জাতি হিসেবে দেখার ইচ্ছা ব্যক্ত করে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

শিশুবক্তা ফাইরুজ মালিহা ওর বক্তব্যে অত্যন্ত সুন্দর করে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও বাংলার ইতিহাস ফুটিয়ে তোলে।

শিশু-কিশোরদের জন্য বক্তব্য রাখতে আসেন স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার প্রবীণসদস্য বুলবুল মহলানবীশ। তাঁর ছোটবেলায় কচি-কাঁচার মেলায় দেখা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঠাট্টা ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ নিয়ে শিশুদের উদ্দেশ তিনি কিছু গল্প বলেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমার পেছনে সবসময় একটি বুলেট ঘুরছে, কিন্তু আমি তো ভীত না।’ তিনি শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ ‘নোঙ্গর তোলো তোলো, সময় যে হলো হলো’- সহ বেশ কয়েকটি গানের অংশবিশেষ উপস্থাপন করেন। তিনি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানান যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের কণ্ঠকে অস্ত্রের মতো ব্যবহার করতে সমর্থ হয়েছিলেন। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সকাল ১০ টায় তিনিই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের সাথে মাত্র ১৮ মিনিটের ভেতর তৈরি করা “বিজয় নিশান উড়ছে ওই’’ গানটি গেয়েছিলেন।

তাঁর বক্তৃতার পর মেলার সহ-সভাপতি ড. রওশন আরা ফিরোজ তিনি ২৫শে মার্চের গভীরভাবে কালরাত্রি উপলব্ধি করার সেই ভয়ানক স্মৃতির কথা বলেন। কারণ, তার বাড়ি ছিল কলাভবনের সামনে। তিনি বলেন, ‘সে বছর ৪২৫ জন ছাত্রীর মধ্যে শুধু ৭ জন হলে ছিলেন। আমরা গোলাগুলির শব্দ শুনে খুব ভয় পাই। আমাদের বাঁচাতে সাহায্য করেন সাহেরা আপা।’ ড. রওশন আরা ফিরোজ আরও বলেন যে, সে রাতে শামসুন্নাহার হলে ৪৯ জনকে ব্রাসফায়ার করে মারা হয় এবং তাঁদের মধ্যে ৩ জন পালিয়ে গিয়েছিলেন। জগন্নাথ হলে ড. জেসি দেব, তার মেয়ে ও মেয়ের স্বামীসহ মৃত্যুবরণ করেন। তিনি সে রাতে কিছু ট্যাঙ্ক দেখেছিলেন সারিবদ্ধভাবে; যার সামনে ছিল লাল পতাকা, অর্থাৎ সে রাতের বৈশিষ্ট্য ছিল, “দেখামাত্র  গুলি।’ শিবমন্দিরের পাশের বস্তিতেও মারা যায় হাজারখানেক মানুষ। সবশেষে তিনি নিজেকে কালের সাক্ষী হিসেবে অভিহিত করে, শিশুদের মঙ্গল কামনা করে বক্তব্য শেষ করেন।

অনুষ্ঠানের আলোচক মেলার সভাপতি খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ শুরুতেই মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও অংশ নেওয়া মানুষের প্রতি গভীর সম্মান জানান। তিনি কিছু বাঙালি ঘাতকের কথা উল্লেখকরেন। ১৫ই  আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সúরিবারে হত্যা ও ৩রা নভেম্বর কারাগারে বন্দী বাংলার মহান চার নেতাকে হত্যা করার ব্যাপারে বাঙালিদের মধ্যে অবস্থিত কিছু নরঘাতকের কথা বলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান যে, একবার পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান ময়মনসিংহের এক উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষিত ও যোগ্যতাসম্পন্ন জেলা জজসাহেবকে বলেন, ‘এই যে, আমার সামনে জেলা জজ সাহেব, জেলা জজসাহেব বসে আছেন; পাকিস্তান না হলে কি এঁরা থাকতে পারতেন?’  কিস্তু তাঁরা ছিলেন প্রখর মেধাবী।

পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা বাঙালিদের সবসময়ই দাবিয়ে রাখতেন। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অবস্থাও ব্যাখ্যা করেন। সে সময় ৭ ভাগ খাদ্য দেশে এবং ৪০ ভাগ খাদ্য বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো। এ অবস্থাকে উন্নত করতে তিনি বঙ্গবন্ধুর অবদান উল্লেখ করেন। আমাদের এ ধরনের বিশ্বাসঘাতকদের বিষয়ে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।

সবশেষে, অনুষ্ঠানের সভাপতি শিশুসদস্য রাজ্যশ্রী সাহা বক্তব্য রাখে। আমাদের মা, মাতৃভাষাকে সম্মান জানিয়ে বক্তব্য দেয় সে। স্বল্পকথায়, বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে বক্তব্য রাখে।

এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয় সব্যসাচী কবির লেখা ‘আমার পরিচয়’ কবিতাটির আবৃত্তি দিয়ে। একটি অসাধারণ নৃত্য পরিবেশন করে মেলার নৃত্যশিল্পীরা; দুটি অসাধারণ দেশের গান গায় মেলার খুদে শিল্পীরা, তারপর একটি সুন্দর নাচের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ হয়।

মহান স¦াধীনতা দিবস আমাদের, বাঙালিদের একটি ঐতিহ্যবাহী গৌরব ও আনন্দের দিন। হাজার হাজার মানুষ একরাতে পাকবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে। কেউ বা করেছেন দেশের জন্য যুদ্ধ, কেউ নিজে যেতে পারেননি বলে থেমে থাকেননি অন্যদের সাহায্য করেছেন। আজ আমরাও বাঙালি জাতীয়তাবাদের মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়ার শপথ গ্রহণ করছি।






Post a Comment

0 Comments

যে দোয়া পড়া সুন্নত কঠিন বিপদ থেকে বাঁচতে