Header Ads Widget

Responsive Advertisement

Ticker

6/recent/ticker-posts

ব্যাংকিং আইনের সংশোধনী বিলঃ বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক নীতিমালা উপেক্ষিত


                                     -  খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

ব্যাংকিং কোম্পানী আইনের কতিপয় ধারা সংশোধনের জন্য জাতীয় সংসদে একটি বিল উত্থাপিত হয়েছে। বিলটি সংসদীয় কমিটিতে প্রেরণ করা হয়েছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। কমিটি ষাট দিনের মধ্যে কাজ শেষ করে বিলটি পুনরায় সংসদে প্রেরণ করবে। বিলটি পাশ হলে দেশের ব্যক্তিখাতের ব্যাংক সমুহে পরিবারতন্ত্র প্রবর্তিত হবে, যা দেশের অর্থনীতিতে পূঁজিবাদের অগ্রযাত্রাকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলবে এবং সমাজের অর্থনৈতিক বৈষম্যকে প্রকট করে তুলবে। বিলটি বঙ্গবন্ধুর নীতিমালা তথা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পরিপন্থী। এমন কি রাষ্টীয় চার মূলনীতির অর্থনৈতিক মৌলনীতির সাথে সংঘাতপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর স্বল্পকালিন শাসনামলে সামাজিক সংহতি মূলক সহনীয় বৈষম্যের যে মুক্তবাজার অর্থনীতির বিকাশ ধীরে ধীরে ঘটছিল, তা জেনারেল জিয়া এবং জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসন আমলে সম্পূর্ণ ধ্বংশ করে দেওয়া হয়। তৎপরিবর্তে কিসিঞ্জারের মার্কিন মুলুকের বেপরোয়া ধনতান্ত্রিক পূঁজিবাদী অর্থনীতি আমদানী করা হয়, যা বঙ্গবন্ধু তথা মুক্তিযুদ্ধের শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার ধারার বিপরিত; এমন কি স্ক্যন্ডিনেভিয়ান তথা ইউরোপীয় সমাজের কল্যান অর্থনীতির সাথে ও সংগতিপূর্ণ নয়। বিস্তারিত বিশ্লেষনের আগে দেখা যাক, বিলটিতে প্রধানত: কি সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধনের দু’টি প্রস্তাব জনসমক্ষে তুলে ধরা প্রয়োজনঃ

১.    বর্তমান আইনে এক পরিবারের অনধিক দুইজন সদস্য একটি ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদে পরিচালক হতে পারেন। সংশোধনী প্রস্তাবে একই পরিবারের ৪ (চার)জন সদস্যকে পরিচালক নিযুক্ত করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
২.    বর্তমানে ব্যাংকের একজন পরিচালক একাদিক্রমে ৬ বছরের বেশী পরিচালক থাকতে পারেন না। সংশোধনী প্রস্তাব পাশ হলে, যে কোন পরিচালক একাদিক্রমে ৯(নয়) বছর পরিচালক থাকতে পারবেন।

যেহেতু সংশোধনী দু’টিকে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক নীতিমালা তথা সংবিধানের অর্থনৈতিক মূলনীতির সাথে সাংঘর্ষিক বলে  প্রতীয়মান হচ্ছে, সেই হেতু প্রথমেই বঙ্গবন্ধু এবং সংবিধানের অর্থনৈতিক মৌলনীতির কিছু কথা উপস্থাপন করছি।

বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার আগে এবং পরে সবসময়েই তাঁর অর্থনৈতিক ধারনা প্রকাশ করেছেন ‘শোষনহীন সমাজ’ কথাটির মাধ্যমে। তিনি ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য হ্রাসকরনের কথা বলেছেন, শোষিতের গণতন্ত্রের কথা বলেছেন, গরীবের মুখে হাসি ফোটানোর কথা বলেছেন। তিনি আরো বলেছেন, বিশ্ব ধনী ও দরিদ্র-এই দুই ধারায় বিভক্ত এবং তিনি দরিদ্রের পক্ষে। ধনী আরো ধনী হোক আর গরীব গরীবই থেকে যাক, তা তিনি চান নাই।

বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরোধিতা দু’টি পর্বে বিভক্ত। স্বাধীনতার পূর্বে এবং স্বাধীনতার পরে। প্রথম পর্বে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের আঞ্চলিক বৈষম্য। স্বাধীনতার পর ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য-হ্রাসকরন ছিল প্রধান এজেন্ডা। ‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন?’ শীর্ষক জননন্দিত প্রচারপত্রটি মূলত: পূর্ব ও পশ্চিম পকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্য তুলে ধরার জন্য রচিত হয়েছিল। ধনী-দরিদ্রের প্রকট বৈষম্য তুলে ধরার জন্য তৎকালিন ‘বাইশ পরিবারের’ কথা বলা হত।

বর্তমানের প্রেক্ষিতে ‘বাইশ পরিবারের’ কথাটি প্রসিঙ্গক। তৎকালিন পাকিস্তানে বাইশটি পরিবারের হাতে দেশের অধিকাংশ সম্পদ পুঞ্জিভুত হয়েছিল। একদিকে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছিল, অন্যদিকে ধনী ২২পরিবার রাষ্ট্রের  রাজনীতি ও শাসন নিয়ন্ত্রন করতো। ধনিক-সৈনিক যোগসাজসের জন্য কখনো গণতন্ত্র বিকশিত হয়নি।

পাকিস্তানের তৎকালিন ব্যাংকগুলোর মালিকানা ছিল পরিবার কেন্দ্রিক। হাবিব পরিবার, সায়গল পরিবার, রেঙ্গুন ওয়ালা পরিবার, আদমজী পরিবার-প্রমুখ বিভিন্ন পরিবার এক বা একাধিক ব্যাংকের মালিক ছিলেন। নাগরিকদের অর্থসম্পদ কোন না কোন ব্যাংকে গচ্ছিত থাকে। ব্যাংকের মালিক বা মালিকবৃন্দ জনগনের গচ্ছিত টাকা অবাধে নিজ নিজ পরিমন্ডলে ব্যবহার করে ধনী হয়ে উঠতেন। এই প্রক্রিয়াতেই ব্যাংক ভিত্তিক ২২ পরিবার গড়ে উঠেছিল।

বাংলাদেশের অর্থঅঙ্গণে যাতে অনুরূপ ব্যাংকভিত্তিক বিত্তবান পরিবার গড়ে না ওঠে, সেজন্যে ৭০ সালের নির্বাচনী মেনিফেষ্টোতে বঙ্গবন্ধু ব্যাংক জাতীয়করণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের রক্ত¯œাত বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু ব্যাংক জাতীয়করন করেছিলেন। রাষ্ট্রীয় খাতকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য এ ব্যবস্থা হয়নি। বরং অর্থনৈতিক বৈষম্যকে যৌক্তিক পর্যায়ে ধরে রাখার জন্যই ব্যাংক জাতীয়করন করা হয়েছিল। অর্থনীতির সুষম বিকাশের ধারনা ও সেইসাথে ছিল। রাজনৈতিক এবং পেশাজীবি দুর্নীতিচক্রের খপ্পরে পড়ে জিয়া-এরশাদের আমলে রাষ্ট্রীয়ত্ব ব্যাংকে যেমন লূটপাট হয়েছিল, বর্তমানেও দুর্নীতি ও লোপাট একই মাত্রায় চলছে। সত্তর-আশি দশকে ব্যাংক বিরাষ্ট্রীকরন এবং ব্যাক্তিখাতে ব্যাংক খোলার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক ধ্বংশের প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছিল বলে ধারনা করা হয়।

যুক্তি হিসাবে বলা হয়, সরকার ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে না। অথচ পার্শবর্তী দেশ ভারতে এতদঞ্চলের বৃহত্তম ব্যাংক ‘ষ্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া’ ২৪ হাজার শাখা নিয়ে সরকারি মালিকানায় সুপরিচালিত হচ্ছে, বছরে হাজার হাজার কোটি রূপী লভ্যাংশ দিচ্ছে সরকারি কোষাগারে। শ্রীলঙ্কায়ও বৃহৎ করেকটি ব্যাংক সরকারি মালিকানায় সুপরিচালিত। কাজেই সমস্যাটা মালিকানার নয়, বরং পরিচালনার। বাংলাদেশে সরকারের কমিটমেন্টের অভাবে এবং ব্যাংকে সরকারী ও রাজনৈতিক অযাচিত হস্তক্ষেপের কারনে লুঠপাট সংঘাটিত হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলিকে পেশাগত শৃঙ্খলার মধ্যে চলতে দেয়া হচ্ছে না।

বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের অর্থনৈতিক মৌলনীতিঃ

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের ঘোষনাপত্রে সুস্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, “বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করনার্থে- সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্ররূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষনা করিলাম।” এই ঘোষনার তাৎপর্য হলো, নবগঠিত বাংলাদেশে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি করা হবে না। ঘোষনার এই কথাগুলো বঙ্গবন্ধুর বহুল উচ্চারিত নীতিমালা।

সংবিধানের ৮ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপরিচালনার যে চার মূলনীতি ঘোষিত হয়েছে, তার মধ্যে অর্থনৈতিক মূলনীতি হিসাবে ‘সমাজতন্ত্র’ রয়েছে। সংবিধানে এর ব্যখ্যা দিয়ে বলা হয়েছিল, “মানুষের উপর মানুষের শোষন হইতে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজলাভ নিশ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হইবে।”

বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্র যে কমিউনিজম নয়, তা তিনি বহুবার বলেছেন। এমনকি সংবিধানে ও বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। সংবিধানের ১৩ অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে যে, রাষ্ট্রের সকল সম্পদ রাষ্ট্রীয়, সমবায় এবং ব্যক্তি মালিকানায় থাকবে। কমিউনিজমে রাষ্ট্রের সকল সম্পদ শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানায় থাকে, রাষ্ট্র নাগরিকদের সম্পদ শুধুমাত্র ব্যবহার করতে দেয়, মালিকানা দেয় না। এখানেই কমিউনিজমের সাথে বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্রের পার্থক্য।

বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্র প্রতিফলিত হয়েছে ইউরোপের স্ক্যান্ডিনেভিয়ান রাষ্ট্রসমুহে। নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেন-এসব দেশে ব্যক্তিখাত ও রাষ্ট্রিয় খাতের মধ্যে সমন্বয় বিধান করা হয়, যাতে মানুষে মানুষে অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট না হতে পারে। ব্যক্তিখাতের গতিশীলতা রয়েছে। কিন্তু কার্টেল, অতি মুনাফা, কারচুপি প্রভৃতির ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রন কঠোর।

বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় খাতকে লুঠতরাজ করে শেষ করে দেয়া হয়েছে। সমবায় খাতের গতিময়তা আনয়নের জন্যই বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠন করেছিলেন। ভুল ব্যখ্যা দিয়ে বাকশাল অঙ্কুরেই  বিনাশ করা হয়েছে। কার্যতঃ রয়েছে শুধু ব্যক্তিখাত। ব্যক্তিখাতকে সাবলিলভাবে চলতে দিতে হবে। কিন্তু গোষ্ঠি বা পরিবার কেন্দ্রীক কার্টেল, মুনাফাখোরি ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যদি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রন না থাকে, তাহলে আর সমাজতন্ত্র বা সামাজিক সুবিচারের অবশিষ্ট কি থাকে।

এ সব আলোচনার প্রেক্ষিতে পর্যালোচনা করতে হবে ব্যাংকিং আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী। বঙ্গবন্ধুর কল্যান অর্থনীতি তথা সংবিধানের সমাজতন্ত্রের সাথে প্রস্তাবিত সংশোধনী কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ অথবা সাংঘর্ষিক। পাকিস্তানী আমলের পরিবার ভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রীয়করণ, আংশিক বিরাষ্ট্রীকরণ এবং ব্যক্তিখাতে ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এক ধরণের সমন্বয় সাধন এবং সার্বজনীনতায় উত্তরণের প্রয়াস লক্ষনীয়। ব্যক্তিখাতের ব্যাংকগুলোকে পারিবারিক নিয়ন্ত্রনমুক্ত রাখার জন্য ব্যাংকিং কমিশন এক পরিবার থেকে একজনের বেশী পরিচালক গ্রহন না করার সুপারিশ করেছিল। ব্যাংক-মালিকদের চাপে তৎকালিন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান এক পরিবার থেকে উর্ধপক্ষে দু’জন পরিচালক নিযুক্তির বিধান রেখে আইন পাশ করেছিলেন।

এখন যদি এক পরিবার থেকে চারজন পরিচালক নিয়োগের আইনী সংশোধনী পাশ হয়, তাহলে পশ্চাৎ যাত্রার অশুভ সূচনা হবে এবং পাকিস্তানী ষ্টাইলে পরিবার ভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থার উন্মেষ ঘটবে। এই পরিবারগুলো শুধু ব্যাংকেরই মালিক থাকবে না, অর্থ ক্ষমতার দাপটে তারা সমাজ নিয়ন্ত্রণ করবে, শিল্প-ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করবে, রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে, এমন কি রাষ্ট্র ও নিয়ন্ত্রণ করবে। সেনাশাসন থেকে মুক্ত হলেও ঋনী-শাসন থেকে মুক্তি মিলবে না। বঙ্গবন্ধুর সাধারণ মানুষের গণতন্ত্র, দরিদ্রজনের সহায়ক সরকার কল্পনায় পরিনত হবে। সংবিধানের গণপ্রজাতন্ত্র পরিনত হবে ধনপ্রজাতন্ত্রে।

ব্যাংক মালিকদের দ্রুত ধনশালী হয়ে ওঠা এবং জাতীয় সম্পদ কুক্ষিগত করার প্রক্রিয়াটি ব্যখ্যা করা যাক। এটি ব্যাংকের মুনাফা থেকে হয় না, যদি ও ব্যাংকের মুনাফার হার আকর্ষণীয়। বিষয়টি বুঝতে হলে ব্যাংকের পরিচালনার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যাংকের ওয়াকিং ক্যাপিটালের মাত্র ১০% (দশভাগ) সকল মালিক বা শেয়ার হোল্ডার মিলে পরিশোধিত মূলধন হিসাবে দিয়ে থাকেন। বাকী ৯০% (নব্বই) জনগণের আমানত থেকে সংগৃহীত। প্রকৃত অর্থে জনগণের টাকায় ব্যাংক চলে, কিন্তু ব্যাংক পরিচালনায় আমানতকারীর অংশগ্রহণ নাই, বোর্ডে তাদের কোন পরিচালক নাই। এই সুযোগেই জনগনের অর্থ ব্যবহার করে মালিক-পরিচালকবৃন্দ ফুল-ফেঁপে ওঠেন। একারনেই উন্নত দেশে পরিচালকদের পলিসি নির্ধারণ ছাড়া পরিচালনায় কোন অংশগ্রহণ থাকে না। বাংলাদেশে এসব বালাই নাই। ব্যাংক পরিচালকেরা সব অর্থেই মালিক এবং পরিচালনাকারী বনে যান। জনগণের ৯০% অর্থ পরিচালকেরা নিজেদের গোষ্ঠিস্বার্থে ব্যবহার করে।

ধরা যাক, একটি ব্যাংকে ৩টি পরিবারের মালিকানা রয়েছে। ব্যাংকিং সংশোধনী পাশ হলে, ঐ ব্যাংকের প্রতি পরিবারের ৪জন করে মোট ১২ জন পরিচালক বোর্ডে থাকতে পারবে। তখন ঐ ব্যাংকে জনগনের হাজার হাজার কোটি টাকা আমানত ব্যবহৃত হবে মূলতঃ ঐ তিন পরিবার এবং তাদের গোষ্ঠি এবং আপনজদের মধ্যে। টাকা জনগণের হলেও ফুলে ফেপে উঠবে মাত্র তিনটি পরিবার এবং তাদের গোষ্ঠি। এটি কি বঙ্গবন্ধুর কল্যান অর্থনীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন নয়? এটি কি সংবিধানের সমাজতন্ত্রের বিপরিতমুখী প্রক্রিয়া নয়?

এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে ভয়ানক অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি হবে। জিয়া-এরশাদের কল্যানে বৈষম্য অনেক বেড়েছে। সংশোধনী পাশ হলে বৈষম্য হুড় হুড় করে বেড়ে যাবে এবং জিয়া-এরশাদের কথা চাপা পড়ে যাবে। ধনতান্ত্রিক মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ এত বেশী যে প্রকট বৈষম্য সত্বেও দারিদ্র নেই। কিন্তু স্বল্প সম্পদের বাংলাদেশে বৈষম্য হবে দারিদ্র তথা সামাজিক অস্থিরতার কারন। বঙ্গবন্ধুর বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থার বিপরিতে বৈষম্যই প্রাধান্য পাবে, যা সংবিধান ও সমর্থন করে না।

ব্যাংকিং আইন সংশোধনী কাদের স্বার্থে? কোটি কোটি আমানতকারীর মতামত নিয়ে দেখুন। ব্যাংকের কয়েক লক্ষ পেশাজীবির মতামত নিয়ে দেখুন। আমানতকারী ও ব্যাংকার পেশাজীবিদের পাশ কাটিয়ে গুটি কয়েক  মালিকের চাপে কাজটি করা কি ঠিক হবে? ব্যাংক পরিচালকদের চাপেই যদি এই সংশোধনীটি পাশ করতে হয়, তাহলে সংশোধনী পাশের পর ক্ষমতায়িত ব্যাংক মালিকদের প্রভাবে বঙ্গবন্ধুর কল্যান অর্থনীতি তথা সমাজতন্ত্রের কোন কিছুই কি আর অবশিষ্ট থাকবে?

সংশোধনীর অন্য অংশটি পরিচালকদের পদায়নের সময় বিষয়ক। এখন একজন পরিচালক একনাগারে ছয়বছর পদে থাকতে পারেন। সংশোধনীতে নয় বছর থাকার বিধান থাকছে। বোর্ডে ক্ষমতার পদে যত বেশী দিন থাকবে, ততবেশী কায়েমি স্বার্থ গড়ে উঠবে। এজন্য সংসদ নির্বাচন ৫বছর পর হয়। শক্তিশালী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও নির্বাচনে যান ৪ বছর পর। বাংলাদেশের ব্যাংক মালিকরা থাকতে চান ৯ বছর। পরিবার ভিত্তিক পরিচালকেরা প্রত্যেকে ৯ বছর করে থাকলে, ব্যাংকের কি পরিনতি হবে, সুস্থ-চিন্তার মানুষের তা ভাবা উচিৎ।

প্রশ্ন উঠতে পারে বিল সংসদে উঠে গেছে। এই পর্যায়ে বিষয়টি তুলে কি লাভ হবে? এ বছর বাজেট বিল সংসদে উঠে গিয়েছিল। কিন্তু দায়িত্বশীল সংসদ সদস্যদের প্রবল প্রতিবাদের মুখে এবং মানবিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত ভ্যাট স্থগিত হয়েছিল এবং ব্যাংক হিসাবের সার্ভিস চার্জ অনেক হ্রাস করা হয়েছিল। এজন্যেই শেষ সময়ে এসে সম্মানীয় সংসদ সদস্যদের এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মনযোগ আকর্ষণ করার এই প্রয়াস।         



Post a Comment

0 Comments

যে দোয়া পড়া সুন্নত কঠিন বিপদ থেকে বাঁচতে