রাশিদুল হাসান জুনায়েদ
১৭ ই জানুয়ারি পালিত হল কচি-কাঁচার মেলার এবছরের বনভোজন। প্রতিবছরই বনভোজন শেষে ওয়ালিদ ভাইয়া কাতর কন্ঠে বলে থাকেন, “এবারই শেষ, আর পারব না, আগামী বছর থেকে আমি আর নাই।” কিন্তু মুখে বললেও এই সংকল্পের বাস্তবায়নের তিনি বরাবরই অসফল। এর কারন সম্ভবত দিদি এবং আমাদের বনভোজন নিয়ে অতিরিক্ত আগ্রহ এবং উন্মোদনা। যাই হোক, আসল কথায় আসি। এবারের বনভোজন অন্যান্য বারের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন রকমের, বিশেষ করে আমরা যারা বনভোজন আয়োজনের জন্য বেশ কদিন আগে থেকে বনভোজনের দিন পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করি। আমার মত দু-একজন একটু আধটু ফাকিবাজি করে তবে সেটা ভিন্ন কথা। এবার আমরা খুব বেশি দূরে যাইনি।
গিয়েছিলাম সোনারগাঁ, লোকশিল্প জাদুঘর। বেশ কাছে হওয়াই খুব একটা তাড়া-হুড়ো ছিল না। আমাদের বনভোজনের একটি বৈশিষ্ট্য হল বনভোজনের আগে এক-দু সপ্তাহে মনে হবে এবার পুরো বনভোজন প্রজেক্ট মুখ থুবড়ে পড়বে কিন্তু বনভোজনের দিন আস্তে আস্তে আমরা যা ভেবে রাখি তার থেকে মানুষ এত বেশি হয় যে বসে সিটের সংকলন হয় না। এবারও যথারীতি তাই হয়েছে, এমন কি বনভোজনের সকালে এসেও অনেকে চাঁদা দিয়েছেন। তবে এসব নিয়ে আমাদের কোন ঝামেলাই হয়নি। তো যাই হোক বনভোজনের দিন সকাল বেলা যথারীতি মেলার প্রাঙ্গন লোকে লোকারন্য। ছোট, মাঝারি, বড় কচি-কাঁচার ভাই-বোন তাদের অভিভাবক এবং আমরা। বাস ছাড়ল সকাল ৯টার আশেপাশে। বাসে সবাইকে বসিয়ে আমরা দাঁড়িয়ে পড়লাম। ডাবল ডোকর বাসে দোতলায় আমরা। বেশিভাগ অভিভাবক নিচতলায়। বাস ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয়ে গেল গান। কোন ভাবেই জমিয়ে তুলতে পারছিলাম না। হঠাৎ করে ওয়ালিদ ভাইয়া হেরে গলা ছেড়ে দিয়ে শুরু করল গান, “তোমায় দেখলে মনে হয়, হাজার বছর তোমার সাথে ছিল পরিচয়।” হঠাৎ পুরো বাস গরম হয়ে উঠল। তারপর একের পর এক গান আর হাসাহাসি। সবাই মিলে আনন্দ করতে করতেই মূহুর্তেই পৌছে গেলাম গন্তব্যে। সবাই বাস থেকে নেমে লাইন ধরে ঢুকলাম লোকশিল্প জাদুঘরে। লোকশিল্প জাদুঘরে তখন মেলা চলছিল। অনেক সুন্দর করে চারদিক সাজানো। খাবারের স্টল, নাগর দোলা, শিশুদের জন্য আরো কিছু রাইড। তবে সবার আগ্রহ নাগর দোলার দিকেই বেশি ছিল। সবাই দল বেধে নাগর দোলায় উঠছে। আর সবার হাতেই যেহেতু স্মার্ট ফোন, অসংখ্য ছবি তুলেছি আমরা। আমাদের সকলের শ্রদ্ধেও আনজাল ভাইয়ের একটি বিশেষ ধন্যবাদ প্রাপ্য। তিনি আমাদের লোকশিল্প জাদুঘরে বনভোজনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। লোকশিল্প জাদুঘরের কাছেই পানাম নগর। আমরা অনেকেই অটোরিক্সা করে ঘুরে এসেছি পানাম নগর। ঘোরাঘুরির শেষে সবাই লোকশিল্প জাদুঘরে কচি-কাঁচার জন্য নির্ধারিত স্থানে একত্রিত হলাম। সেরে নিলাম দুপুরের খাবার। এবার শুরু হল গেইমস্ এবং র্যাফেল ড্র। সবশেষে বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেওয়া হল।
এবারের পুরষ্কারগুলো বেশ আকর্ষনীয় ছিল। আমাদের আমেরিকা প্রবাসী জয়তু ভাই অনেকেই হয়তো চিনেন তাকে, তিনি পুরষ্কারগুলো স্পন্সর করেছেন। তাই তাকে একটি বিশেষ ধন্যবাদ না দিলে লেখাটা অসম্পূর্ণ থেকে যেত। অবশেষে আমাদের ফেরার পালা। এর আগে সবাই যে যার মত একটু ঘোরাঘুরি কেনাকাটা সেরে নিল। কাউকে কাউকে জাদুঘরে ছোট পুকুরের নৌকা ভ্রমনেও নামতে দেখা গেল। এবারে বাড়ি ফেরার পালা সবাই বাসে উঠে গেলাম। সবাই কিছুটা ক্লান্ত। তবু একটি সুন্দর দিন কাটানোর তৃপ্তি সবার চোখে মুখে। আবার হয়ত শীঘ্রই আমরা এমন বনভোজনে যেতে পারব। অচিরেই হয়ত সব আবার ঠিক হয়ে যাবে। ততদিন পর্যন্ত শুধু একটূ ধের্য্য ধরে ঘরে থাকতে হবে।
0 Comments