বার্ষিক সাধারণ সভা-2020
সুদীপ্ত রায়
কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার বিংশতম বার্ষিক সাধারণ সভা ৮ মার্চ ২০২০ কচি-কাঁচা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তিনি বার্ষিক সাধারণ সভায় মেলার কর্মী, তরুণ এবং প্রবীণ সদস্যসহ উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানিয়ে আলোচ্য সূচি অনুযায়ী সভার কার্যক্রম শুরু করেন।
সভার সভাপতি ২০১৯ সালে আমাদের মাঝ থেকে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া দুই সহ-সভাপতি দিল মনোয়ারা মনু এবং কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইনের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা ও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করার জন্য সবাইকে আহŸান জানান।
সভার শুরুতে সভার সভাপতি খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, মেলার সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ ও আহŸায়ককে নিয়ে মঞ্চে আসনগ্রহণ করেন। আলোচ্যসূচি অনুযায়ী প্রথমেই সভার আহŸায়ক সানজিদা আক্তার ইলমা ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভার কার্যবিবরণী পাঠ করে শোনায়। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সানজিদা আক্তার ইলমা কার্যবিবরণী পাঠ সমাপ্ত করে।
সাধারণ সম্পাদক আলপনা চৌধুরী ২০১৯ সালের বর্ষব্যাপী কর্মকাÐ সম্পর্কে বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। বিগত বছরে মেলার কার্যক্রমে আর্থিক সহায়তাদানকারী বম্বে সুইট্স অ্যাÐ কোম্পানী এবং পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের প্রতি বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এ ছাড়া যে সকল ব্যক্তি মেলার বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়তা করেন তাঁদের প্রতিও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।
সাধারণ সম্পাদক, বিগত বার্ষিক সাধারণ সভায় ৩৭ ধরনের কর্মকাÐের উল্লেখ্য করে সেগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রদান করেন। (১) মেলার প্রতিষ্ঠাতাবৃন্দ এবং অনুকরণীয় ব্যক্তিবর্গের জন্মবার্ষিকী উদযাপন এবং তাদের আদর্শ ও অবদান সম্পর্কে আলোচনা (২) কার্যনিবাহী কমিটির নিয়মিত মাসিকসভা, বার্ষিক সাধারণ সভা ও আনন্দমেলা অনুষ্ঠান (৩) স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন (৪) পহেলা বৈশাখে পিঠা মেলা ও নববর্ষবরণ উৎসব উদযাপন (৫) মেলার ৬৩ বছরপূর্তী উৎসব পালন (৬) নতুন মেলা গঠন ও পুরাতন মেলা উজ্জীবিতকরণ (৭) শিশু সাহিত্য বাসর অনুষ্ঠান (৮) সদস্যদের সাফল্য, স্বীকৃতি, বিশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আড্ডা অনুষ্ঠান আয়োজন (৯) দরিদ্রদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ, বৃক্ষরোপন, বনভোজনসহ আরও কিছু নিয়মিত আয়োজন। প্রতিবেদনে ২০২০ সালের জন্য কেন্দ্রীয় মেলার সম্ভাব্য কর্মসূচির উল্লেখ করা হয়।
সভায় বিগত বছরের হিসাব বিবরণী উপস্থাপন করেন মেলার কোষাধ্যক্ষ দীপক চক্রবর্তী। বিবরণীতে বলা হয়, মেসার্স এম. আহমেদ অ্যান্ড কোম্পানী চার্টাড অ্যাকাউন্টেট ২০১৯ ক্যালেন্ডার বছরে হিসাব নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করে। প্রদানকৃত বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী মেলার হিসাব রক্ষণ পদ্ধতি ও জমা খরচ হিসাব নিরীক্ষকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। কোষাধ্যক্ষ বিভিন্ন খাতে ব্যয়কৃত অর্থের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে প্রাপ্ত অনুদানের সংক্ষিপ্ত বিবরণী তুলে ধরেন।
মেলা সহ-সভাপতি ডঃ রওশন আরা ফিরোজ বলেন, সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট এবং আহŸায়কের রিপোর্ট খুব ভালো। বিভিন্ন সমস্যা থাকা সত্তে¡ও মানুষের ইচ্ছাই যে প্রকৃত শক্তি তার উদাহরণ সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া তিনি মেলার দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
মেলার তরুণ সদস্য ইকবাল হাফিজ বলেন, বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন কুপ্রভাব বর্তমান প্রজন্মকে ধ্বংস করছে। বর্তমান পাঠ্যপুস্তকে ছাপাকৃত দাদাভাইয়ের ছড়ায় তাঁর নাম উল্লেখ নাই।
মেলার প্রবীণ সদস্য ড. আনিস রহমান উন্নতমানের হারমোনিয়াম ক্রয়ের ক্ষেত্রে অনুদানের বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য অনুরোধ করেন। মনস্তাত্তি¡ক বিভিন্ন ডকুমেন্টারি নির্মান ও তার প্রচার কাজ সম্পর্কে মেলার কাজ হিসেবে করার আহŸান। শিশুর মনস্তাত্তি¡ক মনোভাব সম্পর্কে শিশু ও অভিভাবকের কাউন্সিলিং করার আহŸান। শিশুদের আঁকা বিভিন্ন ছবি বিক্রি এবং তা দিয়ে তহবিল গঠনের কথা বলেন।
মেলার সহ-সভাপতি খোন্দকার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এবং বিভিন্ন নতুন বিষয় যা শিশুদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেসব বিষয়ে কর্মশালা আয়োজনের প্রস্তাব করেন।
মেলার প্রবীণ সদস্য ডা. সারাহ বানু সূচী বলেন, বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড যা মেলা কর্তৃক পরিচালিত হয় তা সুস্পষ্টভাবে সবার সামনে তুলে ধরার এবং বর্তমান প্রজন্মের মানসিকতা গঠনে মেলার কার্যক্রম প্রনয়ণের আহŸান জানান।
মেলার শিশু সদস্য ফারমিহা আহমেদ শ্রেষ্ঠা শিশুদের সুরক্ষার জন্য ক্যারাটে ক্লাস পরিচালনা করার প্রস্তাব করে।
মেলার প্রবীণ সদস্য মোঃ আমিনুর রশিদ বলেন, আমাদের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতে আরও বেশি পরিমানে মেলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করার কথা বলেন।
মেলার শিশু সদস্য আদিব কিবরিয়া বলে, কাগজের শিল্প গড়ে তোলার জন্য কর্মশালার আয়োজন করা।
মেলার প্রবীণ সদস্য শামসুল হুদা বিভিন্ন সদস্যদের প্রস্তাবিত বিভিন্ন প্রস্তাবনা সম্পর্কে নিজের অভিমত প্রকাশ করেন।
মেলার সভাপতি খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ সুস্পষ্টভাবে হারমোনিয়াম ক্রয়ের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন। বর্তমানে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অপকর্মের নিন্দা জানান। তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে শিশুরা যে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে তা দূর করে আবার বঙ্গবন্ধুর সাথে পরিচিত করানোর জন্য কচি-কাঁচার মেলা কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বিভিন্ন প্রস্তাবনার অকার্যকারিতা তুলে ধরেন। তাছাড়া বর্তমানে সমাজে নারী ও শিশুদের উপর ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।
0 Comments