মুজিববর্ষ উদযাপন
ইশরাত জাহান বুশরা
একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি একজন মুসলমান ও একজন মহৎ ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মœশতবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা আয়োজিত অনুষ্ঠানটি শুরু হয় জন্মদিনের শুভেচ্ছামূলক সঙ্গীতের মাধ্যমে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক। তাঁর কর্মকাÐের মাধ্যমে তিনি হয়ে উঠেছেন অমর। তবে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার সাথে জড়িত তাঁর স্মৃতিগুলো আমাদের হৃদয় উৎফুল্ল করে আজও। তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ও তাঁর আদর্শকে গ্রহণ করাই এ অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য রাখতে আসেন মেলার সাধারণ সম্পাদক আলপনা চৌধুরী। তিনি বলেন ‘‘মুজিব মানে আর কিছু না, মুজিব মানে মুক্তি, পিতার সাথে সন্তানের ঐ না লেখা প্রেম চুক্তি। আসলেই তাই। শেখ মজিবুর রহমান আমাদের দিয়েছেন নিজস্ব পরিচয়, এক অনন্য মানচিত্র। আলপনা দিদি মেলার সাথে জাতির পিতার জড়িত থাকা এবং নানা অনুষ্ঠানে তাঁর আগমন, তাঁর সাক্ষাৎ ইত্যাদি সর্ম্পকে আমাদের বলেন। তিনি আমাদের জন্য বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের বর্ণনাও দিয়েছেন। পাকিস্তান আমলে দুই দুই বার মন্ত্রীত্ব পেয়েও ত্যাগ করেন শুধু তার সৎ-সাহসের জন্য। তাঁর অসাম্প্রদায়িক মনোভাব, সততা, ত্যাগ যে আমাদের দিয়েছে স্বাধীনতা এ কথাও উল্লেখ করেন আলপনা চৌধুরী। সবশেষে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে নিজের মাঝে ধারণ করে বাংলাদেশকে সোনার বাংলাদেশ করে গড়ে তোলার অনুপ্রেরণা মেলার নবীন কচি-কাঁচাদের দিয়ে, তিনি তাঁর মূল্যবান বক্তব্য শেষ করেন।
শিশুবক্তা জুহায়ের ওয়াজির আব্দুল্লাহ। সে আমাদের বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও পরিচয় সম্পর্কে সাধারণ ধারণা দেয়, স্বাধীনতার ভাষণ আমাদের শোনায়। সবশেষে সে সময়ের অপব্যবহার রোধ করে ভালোমত লেখাপড়া করে বাংলাদেশকে পৃথিবীর মানচিত্রে সমুজ্জ্বল করে গড়ে তোলার উৎসাহ জুগিয়ে তার বক্তব্য শেষ করে।
মেলার যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক নিশাত শারমিন নিশি তাঁর বক্তব্যে স্বাধীন-সাবভৌম, সম্ভাবনাময় বাংলার আর্দশবাদী, পরাধীনতার শিকল ভাঙা চির তরুণ, চির ভাস্কর, চির অ¤øান, অবিসংবাদি নেতা বঙ্গবন্ধুর জীবন সম্পর্কে আমাদের জানান। তিনি বলেন, এক কৃষক বঙ্গবন্ধুর জন্য সবজি নিয়ে একবার তার ৩২ নাম্বরের ধানমন্ডি বাড়িতে আসেন। তখন তার বাড়ির কেয়ারটেকার তাঁকে খবর দেন। ফোনে কথা বলতে বলতে বঙ্গবন্ধু তাকে ২০ টাকা দেন কৃষককে দেওয়ার জন্য। কিন্তু কেয়ারটেকার কৃষককে শুধু ১০টাকা দেন। পরে কৃষক বঙ্গবন্ধুকে খুলে বললে বঙ্গবন্ধু ভাবেন এদেশের বাজেটের কথা। যে দেশের দোতলা থেকে একতলায় যেতে যেতে টাকা অর্ধেক হয়ে যায় সে দেশের অর্থনীতি কেমন হবে। তবুও বঙ্গবন্ধু নিজের আদর্শ নিজের ব্যক্তিত্ব ধরে রেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন , আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা। তিনি ছিলেন লোকশক্তির এক অনন্য প্রত্যাশী। ২৬শে মার্চ ১৯৭১ সালে ১২টা ২০ মিনিটে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
কচি-কাঁচাদের উদ্দেশ্যে অনন্য এক বক্তব্য নিয়ে আসেন সাহিত্যিক আলম তালুকদার তিনি মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে কবিতার ছন্দে স্ব-রচিত কবিতা সকলের সামনে পাঠ করেন। ছন্দে ছন্দে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের আপরিসীম ত্যাগ, মহিমা, বাংলার মানুষকে স্বাধীনতার মঞ্চে একীভ‚ত করে এবং সবশেষে প্রাণ দেওয়া সম্পর্কে বলেন। বঙ্গবন্ধু দেশকে মায়ের মতো ভালোবাসতেন। তিনি বলেন মুজিব নামে দেশ, স্বাধীনতা তথা কচি-কাঁচাদের স্বাধীনতা বজায় রাখা এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলার উপদেশ দেন।
মেলার সহ সভাপতি ড. রওশন আরা ফিরোজ তাঁর বক্তব্যে শেখ মুজিবের অবদান শুরু থেকে শিশুদের বলেন। ১৯৫২ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার লক্ষ্যে তিনি ভাষা আন্দোলনে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর এ দেশকে নিয়ে সুদূর প্রসারী চিন্তার কথা জানান। ৫২ থেকে শুরু করে ৬৬‘র ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯’এর গণঅভ্যুত্থান এসব শিশুদের গল্পের মতো বর্ণনা করেন। তাঁর নানা মারা গেলে বঙ্গবন্ধুর সাহায্য সম্পর্কেও তিনি বলেন শিশুদের। বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্রনাথের গান অসম্ভব পছন্দ করতেন। তিনি গল্পের মত করে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা সকলের কাছে বর্ণনা করেন। তিনি রবীন্দ্রনাথের সভ্যতার সংকট রচনায় মহামানবকে বঙ্গবন্ধুর সাথে তুলনা করেন।
কচি-কাঁচাদের প্রিয় এবং মেলার ট্রাষ্টিবোর্ডের সদস্য খোন্দকার মো. আসাদুজ্জামান বক্তব্যের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি সেই পূর্ব বাংলাকে হারিয়ে যাওয়া ছোট শিশুর মত কল্পনা করেছেন। যে কিনা চাইলেও আঁকতে পারে না ছবি, গাইতে পারে না গান, এমন কি ভালো পোশাকও পায় না। সেই শিশুকে তথা বাংলাদেশকে উদ্ধার করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা শেখ মুজিবকে গৌরবান্বিত করতে পারব না, তবে আমরা নিজেদের গৌরবান্বিত করতে পারব। তিনি ছোট সোনামনিদের লেখাপড়া সংষ্কৃতি চর্চা, খেলা, টেলিভিশন দেখতে বলেছেন তবে নিজের কাজ নিজেকেই শেষ করতে হবে এমন মানসিকতা ধারণা করতে বলেছেন। এতে আমরা বাংলাদেশকে বিশ্বের মঞ্চে উপস্থাপন করতে পারব।
তারপর ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে বক্তব্য নিয়ে আসেন মেলার ট্রাষ্টিবোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ড. এ.কে.এম. নূর-উন-নবী। তিনি বলেন বাংলার স্বাধীনতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণ করার আবেদন করেননি এবং গ্রহণ করেননি। তিনি ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ যেদিন প্রথম বাংলার পতাকা উওালন করা হয় এবং বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রথম পতাকা দেন সেদিন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনেছেন। একজন ছাত্রের সাথে পরিচয় হবার অভিজ্ঞতা তিনি বর্ণনা করেন, যে ছাত্র সর্বকালের সেরা বাঙালি, সেরা কবি, সেরা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সেরা সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দাবি করেছিল। সবশেষে তিনি বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশের নকশা তৈরির জন্য শুভেচ্ছা জানান এবং শিশুদের অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
সম্মানিত আলোচক মেলার সভাপতি খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ তাঁর বক্তব্যে কচি-কাঁচার মেলার এক ছোট শিশু নদীর ৩টি দাবি সর্ম্পকে বলেন, সে কচি-কাঁচার মেলার এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ১৭ই মার্চকে জাতীয় শিশু দিবস, শেখ রাসেলের হত্যার বিচার, উটের জকির জন্য নিয়ে যাওয়া শিশুদের ফিরিয়ে আনার দাবি করে। তিনি বঙ্গবন্ধু ও শিশুদের নিয়ে নানা গল্প কচি-কাঁচাদের বলেন। তিনি শিশুদের বঙ্গবন্ধুর ন্যায় মনুষ্যত্বে মানুষ হওয়ার উৎসাহ প্রদান করেন।
সবশেষে বক্তব্য রাখে মেলার বোন রাজ্যশ্রী সাহা, এই শিশু সভাপতি বঙ্গবন্ধুর অসীম ত্যাগকে সকলের সামনে তুলে ধরে। বঙ্গবন্ধুর মত দেশকে ভালোবাসার কথা বলে এবং বাংলাকে সোনার বাংলা করে গড়ে তোলার স্বপ¦ দেখায়।
সবশেষে একটি অসাধারণ সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। মেলার ভাই বোনদের সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠান সফল হয় এবং এর মাধ্যমে শেষ হয় বঙ্গবন্ধুর জন্মশর্তবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
0 Comments