জাতীয় সম্মেলন ২০২০
জুবায়ের উদ্দীন
কেন্দ্রীয কচি-কাঁচার মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত শাখা মেলা ও কেন্দ্রীয় মেলার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে গত ১০ জানুয়ারি ২০২০ অনুষ্ঠিত হয় দ্বিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন। সকাল সাড়ে দশটায় কেন্দ্রীয় মেলার ভাইবোনদের সম্মিলিত সঙ্গীতের মাধ্যমে সম্মেলনটি আরম্ভ হয়। সম্মেলনটি পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয মেলার সভাপতি খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। সহায়তা করেন কেন্দ্রীয় মেলার সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. রওশন আরা ফিরোজ, প্রবীণ সদস্য বদরুল আলম এবং মেলার সাধারণ সম্পাদক আলপনা চৌধুরী।
সম্মেলনের শুরুতে উদ্বোধনী বক্তব্যে মেলার সাধারণ সম্পাদক আলপনা চৌধুরী উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানান এবং সম্মেলন জুড়ে আলোচনার মূল বিষয়বস্তু কী হবে সে ব্যাপারে আলোকপাত করেন। এরপর বক্তব্য রাখেন মেলার সভাপতি খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা সকলেই জানি এই নতুন বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী। সারাদেশ জুড়ে তাই এই বছরটি মুজিববর্ষ হিসেবে পালিত হবে। আর আজকের এই জাতীয় সম্মেলনে আমাদের আলোচনার মূল বিষয় হবে মুজিববর্ষকে ঘিরে আমাদের পরিকল্পনা।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছেন সারাজীবন। কিন্তু প্রত্যেক বাঙালির জীবনে বঙ্গবন্ধুর স্থান রাজনীতির অনেক উর্দ্ধে।’
ইব্রাহিম খালেদ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জানান ১৯৫৫ সালে কীভাবে বঙ্গবন্ধু একদিন মেলার সহ-প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আল-মুতি ভাইকে বলেছিলেন, “৫২’র ভাষা আন্দোলনের যে অনুভূতি, বাঙালির পুনর্জাগরণের এই অনুভ‚তিটা আগামী প্রজন্মের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়াটা জরুরী।” এই যে বাঙালিত্ব এবং বাঙালি জাতির পুনর্জাগরণের এই অনুভ‚তির প্রতিফলন শিশুদের মাঝে দেখার যে ইচ্ছা সেদিন বঙ্গবন্ধু প্রকাশ করেছিলেন সেই একই আকাঙ্খার বাস্তব রূপায়ন হচ্ছে আজকের এই কচি-কাঁচার মেলা। তাই দায়িত্ব ও কর্তব্যের দৃষ্টিকোন থেকে দেখলেও মুজিববর্ষের মাধ্যমে জাতির পিতার আদর্শ এদেশের নতুন প্রজন্ম, এদেশের কচি-কাঁচাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া মেলার সকল সদস্যের অন্যতম দায়িত্ব।
সভাপতির বক্তব্য শেষে শাখামেলা থেকে আগত প্রতিনিধিরা মুজিববর্ষ পালনের উদ্দেশ্যে নিজ নিজ মেলায় গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন। প্রথমেই কেন্দ্রীয় মেলার সাধারণ সম্পাদক আলপনা চৌধুরী মুজিববর্ষ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় মেলার বছরজুড়ে গৃহীত কর্মসূচীগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরেন।
মানিকগঞ্জ গড়পাড়া সারথী কচি-কাঁচার মেলার পরিচালক আবুল খায়ের সিদ্দিকী আবু তাঁর বক্তব্যের শুরুতে সদ্য প্রয়াত কেন্দ্রীয় মেলার সহ-সভাপতি দিল মনোয়ারা মনু এবং সহ-সভাপতি কবি রবিউল হুসাইনকে স্মরণ করেন। তিনি তাঁর মেলার ভাইবোনদের নিয়ে মানিকগঞ্জ জেলার সাতটি উপজেলায় মুজিববর্ষকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কর্মসূচী ও প্রতিযোগিতা আয়োজনের সংকল্প ব্যক্ত করেন। কর্মসূচি আয়োজনে আর্থিক সংকটের কথা তুলে ধরে তিনি এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় মেলার সাহায্য প্রার্থনা করেন।
এরপর বক্তব্য রাখেন উল্লাপাড়া রিমঝিম কচি-কাঁচার মেলার পরিচালক শাহাদাত হোসেন। তিনি জানান তাঁর মেলা হতে ৬জন শিক্ষার্থী কুমিল্লায় আয়োজিত আনন্দমেলায় অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় মেলা আয়োজিত ‘কথা নিয়ে কথা’ কর্মশালায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাঁর মেলার ভাইবোনেরা যে বিশেষভাবে উপকৃত হয়েছে সে কথাও ব্যক্ত করেন।
তিনি আরও বলেন মুজিববর্ষ উপলক্ষে উল্লাপাড়া রিমঝিম মেলা পুরো বছর জুড়ে বিশেষ দিনগুলোতে বিভিন্ন কর্মসূচী আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে শিশুদের নিয়ে র্যালী, দেশাত্মবোধক গানের প্রতিযোগিতা, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, বঙ্গবন্ধুর জীবনী পাঠ, ইফতার ও দোয়া অনুষ্ঠান ইত্যাদি। তিনি জানান ১২টি অনুষ্ঠানে ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা শিশুদের সাথে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করবেন।
চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ নবীন কচি-কাচাঁর মেলার প্রতিনিধি রাসেল হাসান মুজিববর্ষ উপলক্ষে তাঁদের বহুমুখী কর্মসূচির বিস্তারিত উপস্থাপনা করেন। তিনি বলেন তাঁদের উদ্যোগ সমুহের মধ্যে রয়েছে সপ্তাহ জুড়ে আলোচনা সভা ‘খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু’ যেখানে বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে প্রবীন, তরুণ এবং শিশুদের মধ্যে আলোচনা হবে। আলোচক হিসেবে থাকবেন বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যলাভকারী প্রমুখ বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ। এছাড়াও থাকবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতা ও ছড়া প্রতিযোগিতা যেখানে সেরা ১০০টি কবিতা ও ছড়া বাছাই করে রচয়িতাদের পুরস্কৃত করা হবে। তিনি মুজিববর্ষ উপলক্ষে তাঁর মেলার শিশুদের জন্য বিজ্ঞান ও গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজনের সংকল্পও ব্যক্ত করেন।
এরপর বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা পুর্বাশা মেলার পরিচালক নাজমুল হাসান পাখি, কীভাবে মেলা ও বঙ্গবন্ধু তাঁকে মুক্তিযোদ্ধা ও খাঁটি বাঙালি করে তুলেছিলেন তাঁর স্মৃতিচারণ করে বলেন, কুমিল্লা পুর্বাশা মেলা বহু মুক্তিযোদ্ধা তৈরী করেছে। তিনি বলেন, অনুষ্ঠানগুলোতে মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যপ্রাপ্ত বরেণ্য ব্যক্তিত্বদের বক্তব্য রাখার জন্য আমন্ত্রণ জানানোর উদ্যোগটি খুবই ভালো এছাড়াও তিনি সকল মেলার ঠিকানা ও যোগাযোগ বৃত্তান্ত হালনাগাদ করার জন্য উদ্যোগ নিতে কেন্দ্রীয় মেলার প্রতিনিধিদের অনুরোধ জানান। তিনি আরও বলেন, মেলার শিশু ভাইবোনদের স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকাÐে অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন।
দনিয়া সবুজকুঁড়ি কচি-কাঁচার মেলার যুগ্মপরিচালক ইকবাল হাফিজ বক্তব্যে জানান মুজিববর্ষ উপলক্ষে তাঁর মেলার ভাইবোনেরা গীতিনাট্যসহ বছর জুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি শিশুদের মানবিকতা হ্রাস পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং শিশুদের জন্যে সুন্দর ও আনন্দময় শিক্ষার অভাবের দিকটি তুলে ধরেন।
এরপর মুন্সীগঞ্জ সৃজনী কচি-কাঁচার মেলার প্রতিনিধি মোঃ আখতারুজ্জামান তাঁর বক্তব্যে শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে তাঁর মেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাথে মিলে বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করবে বলে জানান তিনি।
সম্মেলনের ফাঁকে ছিল দুপুরের খাবার ও নামাজের বিরতি। এরপর আরও বিভিন্ন মেলার ভাইবোনেরা মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহীত বিভিন্ন মেলার পদক্ষেপসমুহ সম্পর্কে তাঁদের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন। সবার শেষে সভাপতি খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বিভিন্ন মেলার গৃহীত পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা করেন এবং কর্মসূচিগুলো সুষ্ঠভাবে বাস্তবায়িত হবে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। এরপর সদ্য প্রয়াত কেন্দ্রীয় মেলার সহ-সভাপতি দিল মনোয়ারা মনু ও সহ-সভাপতি কবি ও স্থাপতি রবিউল হুসাইনের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করার মাধ্যমে সভার সমাপ্তি ঘটে।
0 Comments