Header Ads Widget

Responsive Advertisement

Ticker

6/recent/ticker-posts

ঐক্যবদ্ধভাবে গার্মেন্টস শিল্পের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে



                                                         খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

বাংলাদেশের সার্বিক আর্থ-সামজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থায় এক ধরনের স্থবিরতা লক্ষ করা যায়। এটার কারণ হল যে বাংলাদেশকে অনেকেই পেছনে টানতে চায় এবং আন্তর্জাতিক সেই চক্রটির সঙ্গে দেশের ভেতরের কিছু লোকজনও জড়িত। এসব কারণে এখানে এক ধরনের কিছুটা স্থবিরতা বা অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। তাই যে পরিমান অর্থনৈতিক উন্নতি হওয়ার কথা ছিল কিংবা সামাজিক অস্থিরতা কম হওয়ার কথা ছিলÑ সেটি দৃশ্যমান নয়। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে গত বছরের শেষ দিকে যে ধরনের অস্থিরতা আমরা দেখেছিলাম, সেই সহিংস অস্থিরতার সূত্র ধরে এর একটি বিশ্লেষণ করা সম্ভব।
বাংলাদেশের যে নতুন প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছে ইতিহাসকে তার যথাস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্যে এবং ভুল প্রচারণা থেকে মুক্ত করার জন্যে এবং আগে যে যুদ্ধাপরাধী ছিল তাদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়ার জন্যেÑ এই বিষয়গুলোর জন্যেই সহিংস ঘটনাগুলো ঘটেছিল। যারা এসব প্রক্রিয়া করতে বাধা দিয়েছিল তারাই অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল। তারা যথেষ্ট শক্তিশালী। পঁচাত্তর সাল থেকে নব্বই সাল পর্যন্ত দীর্ঘ পঁচিশ বছর তারাই ক্ষমতায় ছিল। ্এটা জিয়াউর রহমানের অধীনে হোক, বা জেনারেল এরশাদের অধীনে হোক। এরশাদের শাসনামলকে আমি বলব জিয়ার প্রলম্বিত শাসন। ওই আমলে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, এমনকি সহায়তা করেছিলÑ তারা টাকা-পয়সা অর্জন করেছে, মূলধন সংগ্রহ করেছে, শিল্প করেছে, বাণিজ্য করেছে।
অন্যদিকে যারা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী ছিলেন তাদের এই উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে নেওয়া হয়নি। তারা মূলধন সংগ্রহ করতে পারেনি। এই কারণে যাদের কাছে যে অর্থ জমেছে তাদের সঙ্গে বৈদেশিক সংযোগ ছিল,। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল তৎকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও সৌদিআরব। সে ধরনের কিছু শক্তির সংযোগে গত বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সংগঠনটি সন্ত্রাস করেছিল। সেই অর্থনৈতিক-সামাজিক শক্তিকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয়েছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত তারা বেশ শক্তিশালী বলে মনে হয়। যে কারণে তারা নতুন বিনিয়োগও করছে না, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকেও অনেকটা সরে রয়েছে এবং টাকা-পয়সা বাহিরে পাচার করেছে কিংবা চেষ্টা করেছে। এই জন্য আমি বলব বর্তমানে যেটুকু স্থবিরতা সেটি গত বছরের শেষের দিকের যে ঘটনাবলী তারই প্রলম্বন মাত্র।

২.
এখন চলে আসি বর্তমান গার্মেন্টস সেক্টরের ঘটনাবলীতে। গার্মেন্টস সেক্টরকে যদি আমরা অতীত থেকে এই পর্যন্ত এক নজর দেখে নেই, তাহলে দেখা যাবে ৫-৭ বছর আগে আমাদের অবস্থান ছিল বেশ নিচে। আমরা তুরস্ককে টপকিয়ে তৃতীয় অবস্থানে চলে এলাম। আমাদের উপরে ছিল ভারত ও চীন। পরবর্তীতে রফতানিতে আমরা ভারতকে টপকিয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করলাম। এখন সামনে রইল একমাত্র চীন। যাদের টপকিয়ে আমরা এই পর্যন্ত এসেছি, তারা বিষয়টি সহজভাবে নেয়নি। কারণ এখানে ব্যসায়ের ব্যাপার, লাভের ব্যাপার রয়েছে। তুরস্ক হয়তো এর মধ্যে বেশী থাকবে না, যেহেতু তারা দূরের দেশ। কিন্তু ভারত, তবে সরকার নয়, ভারতের গার্মেন্টস শিল্পের মালিকেরা যথেষ্টই তৎপর রয়েছেন বাংলাদেশের এই শিল্পটিকে দুর্বল করে দিয়ে তাদের যে অবস্থান ছিল সেটি পুনরুদ্ধারের জন্য। আমি গার্মেন্টসের মালিকসহ সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে যা বুঝতে পেরেছি, তারা মনে করছেন দুটি শক্তি আমাদের গার্মেন্ট শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। একটি হল ভারতের গার্মেন্টস শিল্পের যারা মালিক, তারা একটি পক্ষকে টাকা-পয়সা দিয়ে চেষ্টা করছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের যারা কীনা ক্রেতা, যাদের সঙ্গে ভারতের রফতানিকারকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে, তাদেরকে এক্ষেত্রে ব্যবহার করছে বলে জানা যায়। তারা বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকারের নামে বিভিন্ন প্রচরণা চালিয়ে, এমনকি হয়তো টাকা-পয়সা ছড়িয়ে দিয়েও অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। দুঃসংবাদ হল তারা কিছুটা সফল হয়েছে। এরই মধ্যে, অর্থাৎ গত কয়েক মাসের মধ্যে, সঠিক পরিসংখ্যান আমার জানা নেই, তবে এটা আমাদের একটি পর্যবেক্ষণ বলা যায়, সম্ভবত আমাদের গার্মেন্টস রফতানি ভারতের রফতানির তুলনায় কিছুটা নিচেই নেমে গেছে। সেজন্য বলা যায়, এটি একটি গভীর ষড়যন্ত্র।
এটাকে আরেকভাবে ব্যাখ্যা করতে চাই। তোবা গার্মেন্টসে শ্রমিকদের কয়েক মাস বেতন হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই এটা নিয়ে আন্দোলন হবে, হতেই পারে। হওয়া উচিত। গরীব মানুষদের বেতন তারা কেন দিবে না। কিন্তু লক্ষ করে থাকবেন, যেভাবে হোক বিজিইএমএ মালিককে চাপ দিয়েছেন, তারা কিন্তু দুই মাসের বেতন দিয়ে দিয়েছেন। আরেক মাসের বেতন ১০ আগস্ট দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর পরেও তো আর আন্দোলনের প্রশ্ন থাকে না। কিন্তু দেখা গেল, যদিও দাবি পূরণ হয়ে গেছে, কিন্তু তারা কেবল আন্দোলনই করছে না, তারা গার্মেন্টস শিল্পের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই আন্দোলন করতে চাচ্ছে। তারা গার্মেন্টস শিল্পগুলোকে বন্ধ করে দিতে চাচ্ছে। এতেই বুঝা যায়, আমি পরিস্কারভাবেই বলতে চাই, এটা শ্রমিকের কল্যানের জন্য নয়। শ্রমিক সংগঠনের যে ভাবে কাজ করতে হয়, সেরকম হচ্ছে না। এটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পকে নামিয়ে আনার একটি সুদূরপ্রসারি ষড়যন্ত্র। এবং যেসব শ্রমিক নেতাদের নাম-ধাম চলে এসছে গোয়েন্দারা যদি একটু খোঁজ-খবর নিয়ে দেখে, দেখা যাবে তারা বেশ বিত্তের মালিক। পয়সা-কড়ি আছে। তারা শ্রমিক নন। তারা বিদেশ থেকে পয়সা পান। যে পয়সা পেয়ে তারা ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে নিয়োজিত আছেন। কারণ ভারতীয়রা, মার্কিনীরা এখানে এসে আন্দালন করতে পারবে না, করতে হবে এদেশে যারা তাদের পদলেহী, যাদের টাকা-পয়সা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে, তাদের মাধ্যমে। আমার মনে হয়, সরকারকে এই বিষয়ে কঠোর হতে হবে।
তবে শ্রমিকদের সত্যিকারের দাবি-দাওয়া থাকে। বেতন হয়না, বোনাস হয়না কিংবা অন্য কোন সমস্যা সে ক্ষেত্রে সরকারের কাজ হবে বিজিইএমএকে চাপ দেওয়া এবং শ্রমিকদের দাবি-দাওয়াগুলো মিটিয়ে ফেলা। কিন্তু শ্রমিকদের জিম্মি করে একটি ষড়যন্ত্রকে পরিপালন করাÑ এটি কোন স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। আমি মনে করি বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি উপলব্ধি করবেন। সেই সঙ্গে আমাদের দেশের শিল্পের মালিক যারা রয়েছেন, বিজিইএমএ সহ সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে, আমরা কিন্তু বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করে  উঠে এসেছি, কারো দয়ার দান হিসেবে নয়। তাই প্রতিযোগিতা করে যাদের হারিয়ে দিয়েছি তারা কিন্তু সহজে বিষয়টি মেনে নিবে না। চেষ্টা করবে প্রতিহিংসায় বশবর্তী হয়ে অথবা ব্যবসা ছিনিয়ে নেবার জন্য আমাদের আঘাত করা। সেই আঘাত মোকাবিলায় কেবল সরকার নয়, বিভিন্ন শিল্পের মালিক যারা তাদেরকেও একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে, সরকারের কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে। এই প্রক্রিয়াতেই আমরা বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারব।

৩.
আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের ভেতরে যে সমস্যা নেই তা বলা যাবে না। তবে সংকট কোন্ দেশে নেই। আমাদের সংকটগুলো চিহ্নিত করে আলাপ-আলোচনা করা যায়। যখন সমস্যার সুরাহা না হয় তখন না হয় বড় ধরনের আন্দোলনের কথা ভাবা যেতে পারে। কিন্তু যেখানে বিজিইএমএ বেতন হাতে নিয়ে বসে আছে, শ্রমিকরা বেতন নিয়েও গেছে সেখানে আন্দোলন হওয়ার প্রশ্ন উঠে না। আসলে এটা তো আন্দোলন নয়, এটা হল এক ধরনের ষড়যন্ত্র।
এটা ঠিক যে উন্নত দেশে শ্রমিকদের যে বেতন ও সুযোগ-সুবিধা সেটা বাংলাদেশে নেই। আমাদের দেশের হিস্ট্ররিক্যাল রিপোর্ট যদি দেখা হয়, আগে এই বেতন অত্যন্ত কম ছিল। সে হিসাবে এখন ভাল। কয়েকদিন আগেও বেতন বাড়ানো হয়েছে। আস্তে আস্তে করে শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়, চাপ দিয়ে হলেও বিজিইএমএকে বেতন বাড়ানোতে রাজি করানো হয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি অব্যাহত রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে এরা অত্যন্ত দরিদ্র, এখানে প্রচুর নারী শ্রমিক রয়েছে। সরকার এই বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। মালিকরাও চাপে পড়ে হোক বেতন কিন্তু বাড়াচ্ছে। কাজেই এই প্রক্রিয়া ভবিষ্যতেও আমাদের সমর্থন থাকবে। তবে ষড়যন্ত্রে পা দেওয়া থেকে নিবৃত্ত রাখতে হবে।
আরেকটি কথা বলতে চাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যারা কিনা শ্রমিক অধিকারের কথা বলছেন, তাদের দেশে শ্রমিক সংগঠন কয়টি? তাদের দেশে অনেক জায়গাতেই শ্রমিক সংগঠন করতে দেয়া হয়না। অনুমোদন দেওয়া হয় না। কারণ সংগঠনগুলো নানা অরাজকতা সৃষ্টি করে। নিজের দেশের শ্রমিকদের অধিকার তারা সংরক্ষণ করেন না, তাদের তো কোন অধিকার নেই বাংলাদেশে এসে শ্রমিক অধিকার নিয়ে কথা বলার। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। এখানে আমাদের একটি সমাজ আছে। আমাদের যারা নি¤œবিত্ত লোক তাদের দেখাশোনা করতে আমরাই যথেষ্ট। আমেরিকার বুদ্ধি বা শক্তি ধার করে এনে এখানে এগুলো করার আমরা অত্যন্ত বিরোধী।
সরকার যেহেতু জনগণের ভোটে নির্বাচিত এবং জনগণেরই অংশ হল শ্রমিক। তাই সরকারের একটি স্বভাবজাত ঝোঁক থাকে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য। এটা আমরা আগাগোড়া দেখে আসছি। এই যে গত বছর ও আগের বছর যে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করা হল সেখানে কিন্তু বিজিইএমএ রাজি ছিল না। কিন্তু সরকার কিছুটা চাপ প্রয়োগ করেছে। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে চাপ প্রয়োগ করেছেন। যে কারণে বিজিইএমএ এটা মেনে নিতে বাধ্য হয়। এবং সরকারের ভূমিকা এরকমই থাকে। আর যারা বলছেন সরকার মধ্যস্থতাকারী হিসাবে মালিকদের পক্ষে, সম্ভবত গার্মেন্টস সেক্টরের ক্ষেত্রে আমি বলব কথাটি ঠিক না। তারা সরকারকে ঝামেলায় ফেলতে চাচ্ছে, সরকারকে বিতর্কিত করতে এসব বলছে। কারণ তিন মাসের বেতন বাকি। সরকার মধ্যস্থতা করেছে। করে বেতনটা তো দিয়েছে। তবে মালিকদের পক্ষে কি করে গেল। কাজেই যারা ষড়যন্ত্র করছেন, তারা সরকারকেও আঘাত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন। সরকার শ্রমিকদের পক্ষেই থেকেছে। ভবিষ্যতে কি করবেন জানি না। তবে এই পর্যন্ত সরকার শ্রমিকদের স্বার্থের অনুকুলেই ভুমিকা রেখেছেন।

৪.
আমরা প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই গার্মেন্টস শিল্পকে এগিয়ে নিয়েছি। আমেরিকা জিএসপি আমাদের জন্য একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। জিএসপি আমরা ইউরোপে পাচ্ছি। যেখানে আমাদের পোশাক রফতানি সবচেয়ে বেশী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গার্মেন্টস সেক্টরে আমরা কোন দিনই জিএসপি পাইনি। আমরা প্রয়োজনীয় কর দিয়ে তাদের মার্কেটে প্রবেশ করেছি। এবং কর দিয়েই টিকে আছি। কাজেই তাদের জিএসপি বাতিল করা মানে প্রচার না ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ। অথচ অনেকে জানে না ওখানে আমরা জিএসপি পাই না। গার্মেন্টস ছাড়া অন্যান্য রফতানি পণ্যে আমরা সামান্য পরিমান জিএসপি সুবিধা পেতাম। যেমন সিরামিক। সেটা নগন্য। খুব কমই রফতানি হয়। উল্লেখযোগ্য কোন বিষয় নয়। সেখানে তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে। দেখাচ্ছে শ্রমিক অধিকারের স্বার্থে তারা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আসলে যেটা আমরা আগেও পাইনি, সেটা নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই। আর গার্মেন্টস যেহেতু কর দিয়ে ওখানে দাঁড়াতে পেরেছে, আমাদের অন্যান্য সম্ভাবনাময় রফতানি পণ্য সেখানে একইভাবে দাঁড়াবার যোগ্যতা রাখে। তাদের দয়ার ওপর আমরা নির্ভর করতে চাই না। আমরা প্রতিযোগিতা করেই টিকে থাকতে চাই। আর যারা আমাদের প্রতি সত্যিকারের সহানুভুতিশীল যেমন ইউরোপ, তারা জিএসপি দিচ্ছে, বাতিল করবেনা বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কাজেই আমাদের মূল ব্যবসায়িক সম্পর্ক যাদের সঙ্গে, যেমন ইউরোপ, তারাতো বন্ধুভাবাপন্ন। কাজেই মার্কিনীদের আচরণ ষড়যন্ত্রের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
শ্রমিকদের বেতন-ভাতা, বোনাস নিয়মিত পাওয়া চাকুরিবিধির একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এগুলো দাবি করার কোন বিষয় নয়। কিন্তু প্রাইভেট সেক্টরে, সেটা কেবল গার্মেন্টসে নয়, অনেক মালিকরা ঠিকমতো বেতন-ভাতা দেয় না। সরকার মাসে মাসে বেতন দিয়ে দেয়। কিন্তু অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত বেতন হয় না। গার্মেন্টসে শত শত প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তাদের মধ্যে একটি মাত্র, তোবা গার্মেন্টস সময়মতো বেতন দিতে পারে নি। মালিক জেলে ছিলেন। এছাড়া আরো কারণ থাকতে পারে। তাই এটাকে আমি খুব বড় করে দেখছি না। এটা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এবং সরকার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যস্থতা করে সেই বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। সেজন্য বলছি তোবা গার্মেন্টসকে কেন্দ্র করে কেউ কেউ এখানে হিংসা ছড়াতে চাইছে। যাতে করে আমাদের গার্মেন্টস সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাহলে ভারতের লাভ হবে, শ্রীলঙ্কার লাভ, আমেরিকার যে প্রতিভু আছে তাদের লাভ হবে।
গার্মেন্টস সেক্টরে যেসব দুর্ঘটনা ঘটেছে সেগুলো কিন্তু কেবল বাংলাদেশে ঘটছে না। এই সপ্তাহ খানেক আগে চীনের একটি বড় কারখানা ধ্বসে প্রায় শ’খানের লোক মারা গেল। এরকম বিভিন্ন জায়গায় ঘটছে। এগুলো যেভাবে মিডিয়ায় বড় বড় করে দেখানো হচ্ছে, আমরাও চাই এগুলো জনগণ জানুকÑ এগুলো শিল্পায়িত দেশে কখনো কখনো ঘটছে। জাপানে যেমন আনবিক বিপর্যয় ঘটে গেল। এখন কথা হল, ঘটার পর বিচার হওয়ার প্রয়োজন। এটা কিন্তু শিল্পের বিষয় নয়, এটা সুশাসনের বিষয়। আমি অবশ্যই বলবো আমাদের দেশের কোন সরকারই সত্যিকারের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। সে ধরনের সক্ষমতা তারা এখনো অর্জন করতে পারেনি। তবে তাজরিনের মালিকের শাস্তি না হলেও, বিচারের প্রক্রিয়া তো চলছে। তাকে জেলে নেয়া হয়েছিল। দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। দায়ী ব্যক্তি যেন শাস্তি এড়াতে না পারে সেটা দেখতে হবে। এটা আমাদের দাবি। যদি আমরা শাস্তি দিতে পারি, ভাল কাজ করলে পুরস্কার দিতে পারি, তাহলে কিন্তু সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। অপেক্ষাকৃত ভাল একটি আবহ আমরা সৃষ্টি করতে পারব।

৫.
সমস্যা থাকবেই। এটা কখনো মিটানো সম্ভব নয়। আমাদের এমন একটি প্রক্রিয়া সৃষ্টি করতে হবে যাতে মালিক-শ্রমিক দরকষাকষির মাধ্যমে নিজেরাই নিজেদের সমস্যা সমাধান করতে পারে। মালিক যে হারে আয় করেন যে অনুপাতে যেন শ্রমিক বেতন প্রদান করেন। সেখানে সরকার সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। আমার মতে, রেখেও আসছেন। তবে আমরা চাইব সমস্যা সমাধানে ধারাবাহিক প্রক্রিয়া যেন অব্যাহত থাকে। সেটা সুশাসনের সঙ্গে জড়িত। এটা না হলে আমাদের সমাধান প্রক্রিয়াটি বিঘিœত হবে। আর সুশাসন প্রতিষ্ঠার মূল উপাদান হলÑ রাষ্ট্রের যে সংস্থাগুলো আছে এগুলো শক্তিশালী করা। দুদক , বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে শক্তি নিয়ে চলবে। সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ শক্তিশালী হবে। নিয়মমতো চলবে। আমাদের ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিকে স্বাধীন ও শক্তিশালী হতে হবে। এমনকি সরকারের যে প্রশাসনিক কাঠামো, বিচার বিভাগ প্রত্যেককেই স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে। এটি একটি শিক্ষণ প্রক্রিয়া, যা একটি দেশ রাতারাতি শিখে না। আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে বেশ কিছুদিন হল, কিন্তু দু, দুটি মার্শাল ল জারি হওয়ায় আমরা বেশ পিছিয়ে পড়েছিÑ এটা আমি মনে করি। এখন যাতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র চলে, প্রতিষ্ঠানগুলো যদি আস্তে আস্তে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেয়- তা হলে এই প্রক্রিয়ায় আমাদের সমস্যার সমাধান ত্বরান্বিত হবে।  
       

Post a Comment

0 Comments

যে দোয়া পড়া সুন্নত কঠিন বিপদ থেকে বাঁচতে