Header Ads Widget

Responsive Advertisement

Ticker

6/recent/ticker-posts

বালিয়াটি জমিদারবাড়ি ----বনভোজন ২০১৮


                             ফারমিহা আহমেদ শ্রেষ্ঠা

২৬ জানুয়ারি ২০১৮ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে বাবাকে ডাকতে থাকি। বাবা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠে বনভোজনে যাব। বনভোজনে যাবÑখুব আনন্দ লাগছে। সকালের নাস্তা না করেই বাসা থেকে মেলার উদ্দেশে রওনা হলাম। সকাল ৭টায় মেলা ভবনে উপস্থিত হলাম। অবাক হয়ে দেখলাম মেলা ভবনে সবাই চলে এসেছে। আমার প্রিয় আলপনা দিদি সবার সঙ্গে কুশলবিনিময় করছেন। ওয়ালিদ ভাই সবাইকে লাইন ধরে বাসে উঠানোর জন্য ব্যস্ত। কেউ আগেই বাসে উঠে বসে আছে। কেউ কেউ সকালের নাস্তা নিয়ে বাসে উঠছে। কেউ কেউ এ বাসে না অন্য বাসে বসবেÑ তা নিয়ে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। যথারীতি আমরা একটা বাসে উঠে বসলাম। বাস মানিকগঞ্জের উদ্দেশে চলতে থাকলো। খুব মজা হবে, আমরা যাচ্ছি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া বালিয়াটি জমিদারবাড়ী। বাবার কাছে জানতে চাইলাম, বাবা বললেন সাটুরিয়া জমিদারবাড়ী ইতিহাস।

বালিয়াটি প্রাসাদ বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত মানিকগঞ্জ জেলার সদর থেকে আনুমানিক আট কিলোমিটার পশ্চিমে এবং ঢাকা জেলা সদর থেকে পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার দূরে সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রামে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশে ১৯ শতকে নির্মিত অন্যতম প্রাসাদ। একে বালিয়াটি জমিদারবাড়ি বা বালিয়াটি প্রাসাদ বলেও ডাকা হয়।

মোট সাতটি স্থাপনা নিয়ে এই জমিদারবাড়িটি অবস্থিত। বালিয়াটি জমিদারবাড়ি বা প্রাসাদটির সবগুলো ভবন একসঙ্গে স্থাপিত হয়নি। এই প্রাসাদের অন্তর্গত বিভিন্ন ভবন জমিদার পরিবারের বিভিন্ন উত্তরাধিকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে নির্মিত হয়েছিল। বর্তমানে কেন্দ্রীয়ে ব্লকটি যাদুঘর। এই প্রাসাদটি বাংলাদেশ প্রতœতাত্ত্বিক বিভাগ কর্তৃক সংরক্ষিত ও পরিচালিত।

“গোবিন্দ রাম সাহা” বালিয়াটি জমিদার পরিবারের গোড়াপত্তন করেন। ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি লবণের বণিক ছিলেন। জমিদার পরিবারের বিভিন্ন উত্তরাধিকারের মধ্যে “কিশোরীলাল রায় চৌধুরী এবং রায়বাহাদুর হরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী তৎকালীন শিক্ষাখাতে উন্নয়নের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। ঢাকার জগন্নাথ কলেজের (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কিশোরীলাল রায় চৌধুরীর পিতা এবং তাঁর নামানুসারে উক্ত প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়।

বালিয়াটি জমিদারবাড়ি নামে পরিচিত, এই প্রাসাদ চত্বরটি প্রায় ১৬,৫৫৪ বর্গমিটার জমির উপর ছড়িয়ে থাকা ৭টি দক্ষিণমুখী দালানের সমাবেশ। এই দালানগুলো খ্রিষ্টীয় মধ্যঊনবিংশ শতক থেকে বিংশ শতকের প্রথমভাগের বিভিন্ন সময়ে জমিদার পরিবারের কয়েকজন সদস্যের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। সামনের চারটি প্রসাদ ব্যবহৃত হত ব্যবসায়িক কাজে। এই প্রাসাদের পেছনের প্রাসাদকে বলা হয় অন্দর মহল। এই মহলে তাঁরা বসবাস করতেন।
বালিয়াটি প্রাসাদ ১৯ শতকে নির্মিত রেনেসাঁ যুগে অর্থাৎ এটি স্থাপত্যকৌশলের একটি অন্যতম নিদর্শন। এই বিশাল প্রাসাদটি ২০ একরের চেয়ে বেশি স্থান জুড়ে অবস্থিত। আসলে এই প্রাসাদটি একই রকম দেখতে কিন্তু পাঁচটি স্বতন্ত্র বক্লের সমন্বয়ে গঠিত; যার সর্ব পূর্বদিকের একটি বক্ল ব্যতীত বাকি চারটি বক্ল এখনও বিদ্যমান। বর্তমানে চারটি বক্ল  আছে যার মধ্যে মাঝের দুইটি বক্ল, যার একটি দ্বিতলবিশিষ্ট এবং আরেকটি টানা বারান্দাবিশিষ্ট যা তিনতলাবিশিষ্ট।

এই প্রাসাদের চারটি বক্লের পিছন অংশে চারটি আলাদা অভ্যন্তরীণ ভবন বা অন্দরমহল আছে। উত্তরদিকে কিছুদূরে অবস্থিত পরিত্যক্ত ভবনটি হল বহির্মহল যা কাঠের কারুকার্যসম্পন্ন। এই ভবনে প্রাসাদেরÑচাকর বাকর, গাড়িরাখার গ্যারেজ ও ঘোড়াশাল ছিল বলে ধারণা করা হয়। এই বিশাল প্রাসাদটির চারপাশ সুউচ্চ দেয়াল দ্বারা পরিবেষ্টিত। তিনটি প্রবেশপথ রয়েছে এই প্রাসাদের; যার প্রত্যেকটিতে অর্ধবৃত্তাকার খিলান আকৃতির সিংহ খোদাই করা তোরণ বিদ্যমান।

দক্ষিণদিকে অর্থাৎ সম্মুখভাগের ইমারতগুলোতে কোরিনথিয় স্তম্ভের সারি রয়েছে । এ ছাড়াও স্থাপনাগুলোতে দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য লক্ষ করা যায়। জমিদারবাড়ির ভেতরে রঙমহল নামে খ্যাত ভবনে বর্তমানে জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে।

বাবার কাছ থেকে ইতিহাস শুনতে শুনতে মনের মধ্যে জমিদারবাড়ি  নিয়ে একটি ছবি  এঁকে ফেলি। এরইমধ্যে জমিদারবাড়ির সামনে বাস থেমে গেল। আমাদের সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য মানিকগঞ্জ মেলার পরিচালক আবুল খায়ের আবু মামা, সাধারণ সম্পাদক সহ অনেকে আমাদের শুভেচ্ছা জানালেন। আমাদের সাথে গিয়েছিলেন, আমাদের প্রিয় খালেদ ভাই, রওশন আপা, অধ্যাপক ড. এ.কে.এম. নূর-উন-নবী, আলপনা দিদি, খোকন ভাই, ওয়ালিদ ভাই, নিশি আপু, কাওসার ভাই, জুনায়েদ ভাই, পিয়াল ভাই ও আরও অনেকে। জমিদারবাড়িতে আমি অনেক কিছু দেখেছি। পুরোনো আসবাবপত্র ও সাত ঘাটওয়ালা পুকুর, অনেক অনেক ফুল, আর আমি অনেক ছবিও তুলেছি। আর সেখানে আমি আমার বন্ধুদের সাথে অনেক খেলা করেছি বড় মাঠে। আমি সেখানে অঙ্কদৌড় প্রতিযোগিতা করেছি। মায়েরা খেলেছেন পিলো-পাসিং। বাবারা খেলেছেন ছবিতে টিপপরানো।
বনভোজনে আমরা খেয়েছি পোলাও, মুরগির রোস্ট, মুরগির রেজালা, চিকেন ভেজিটেবল, পাখির মাংস, পায়েস ও কমলা। সারাদিন ধরে আমরা সবাই মিলে অনেক আনন্দ করেছি। আসার সময় আমরা বাসে অনেক অনেক মজা করেছি। ২০১৮ এর বনভোজন খুব ভালো লেগেছে। আমি খুব খুশি, আবার অপেক্ষায় থাকব আগামী বনভোজনের।


Post a Comment

0 Comments

যে দোয়া পড়া সুন্নত কঠিন বিপদ থেকে বাঁচতে