Header Ads Widget

Responsive Advertisement

Ticker

6/recent/ticker-posts

বর্ষবরণ ১৪২৬


                                                            ইশরাত জাহান বুশরা

আমরা বাঙালিরা আমাদের জীবনকে আনন্দময়তার সঙ্গে উদ্যাপন করতে ভালোবাসি। তা সে খাজনা দেওয়াই হোক বা নতুন চাল ঘরে তোলার আনন্দই হোক, এরই ধারাবাহিকতা আমরা বাংলা নববর্ষ পালন করে আসছি যা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের উৎসব। এ উৎসবের প্রচলন হয়েছিল স¤্রাট আকবরের সময়; এর কারণ ছিল খাজনা আদায়কিন্তু এখন এটি বাঙালির প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। খাজনা আদায়ের সেই পুরানো উৎসব এখন আর নেই।


 তাই ১৪২৫-কে বিদায় জানিয়ে, ১৪২৬ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিতে পহেলা বৈশাখ কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্ষবরণ ১৪২৬ উদ্যাপন এবং সেই সাথে পিঠাউৎসব।

বাঙালি নারীদের পিঠা বানানোর অসাধারণ হাতের পরিচয় পাওয়া যায় মেলার সদস্যদের মায়েদের জন্য আয়োজিত‘পিঠা উৎসবে’। তাঁরা নিজেরা অনেক পিঠা বানিয়েছেন, যা দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও বেশ মজা ছিল। ১৬ জন প্রতিযোগীকে বেলা ১১ টায় ৩ জন বিচারকের পরিচালনায় বিচার করে বিজয়ী নির্বাচন করা হয়। বিচারক ছিলেন রান্না বিশেষজ্ঞ রিমা জুলফিকার, লবি রহমান, পুষ্টিবিদ আক্তারুন্নাহার আলো। এছাড়াও, তাঁরা অভিভাবকদের রান্না ও খাদ্য পরিবেশন সম্পর্কে বেশকিছু উপদেশ দেন, যা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে মাসুরা আফরিন কচি-কাঁচার মেলার নাম লিখে একটি পিঠা উপস্থপন করেন, যা ছিল অসাধারণ।




পিঠাউৎসবের পরপরই শুরু হয় বর্ষবরণ ১৪২৬ উদ্যাপনের আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রথমেই কচি-কাঁচাদের জন্য বক্তব্য রাখতে আসেন মেলার সহ-সভাপতি খোন্দকার মো. আসাদুজ্জামান। কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার শিশু-কিশোরদের তিনি এ দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে বলেন। আমাদের এ সংস্কৃতি কতটাসমৃদ্ধ তা আমাদের জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের সংষ্কৃতি আমাদের জাতি নামক গাছের শিকড়। তাই আমাদের উচিত সংষ্কৃতিকে ধরে আরও বেশি নিজেকে সমৃদ্ধ করা।’

এরপরই আসে শিশুবক্তা ঊষষী দিব্যাংশু তমঘœ মহীন তার বক্তব্য পরিবেশন করতে।সে স্বল্পকথায় বাংলার নতুন বছর ও পহেলা বৈশাখের ইতিহাস সকলকে জানিয়ে যায়। আর সাথে মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশেও পহেলা বৈশাখ পালন করা হয় বলে জানায় সে।






বম্বে সুইটস এর হেড অব মার্কেটিং শ্রী ডি ডি ঘোষাল তাঁর বক্তৃতায় বলেন, আজকের যুগের শিশুরা অত্যন্ত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এবং তারাই পারবে দেশকে বদলাতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবীর কিছু স্বল্পসংখ্যক জৈনধর্মের মানুষ বছরে অন্তত একদিন সকল আত্মীয়-স্বজন,বন্ধ-ুবান্ধবদের বাড়ি যায় এবং নিজেদের ভুলের জন্য ক্ষমা চায়।’ তাদের ক্ষমা চাওয়াকে নিজেদের আদর্শ মনে করার জন্য উপদেশ দেন শ্রী ডিডি ঘোষাল। তিনি এর সাথে বাঙালির আপ্যায়নের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, আমাদের জীবনকে প্রয়োজনীয় করে গড়ে তোলার জন্য নিজের জীবনকে বুঝতে পারতে হবে। এভাবেই আমরা দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হব।’

তারপর বক্তব্য রাখেন কচি-কাঁচার মেলার প্রবীণসদস্যসাবেক রাষ্ট্রদূত আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন যে, তিনি প্রায় ৪৫ বছর ধরে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার সঙ্গে যুক্ত। তিনি নিজেকে কচি-কাঁচাদের একটি অংশ বলে এখনও মনে করেন এবং নিজেকে অত্যন্ত সৌভাগ্যবান মনে করেন।

কচি-কাঁচাদের উদ্দেশে কিছু বলতে আসেন মেলার সভাপতিখোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ। তিনি বলেন,‘আমরা হয়তো বাংলাকে ভালোবাসি কিন্তু শুধুমাত্র ২১ শে ফেব্রুয়ারি ও  পহেলা বৈশাখ বাঙালি হয়ে যাই আমরা।’  তিনি বলেন, ‘জাপানের একটি হোটেলের সাধারণ ওয়েটার ইংরেজি জানা সত্ত্বেও ভাষার সম্মান রক্ষার্থে প্রয়োজনেও ইংরেজি বলে না।’ নুসরাতের মতো নারীরা যেন সহিংসতার শিকার না হয় ও তার শিক্ষকের মতো মানুষ যেন শিক্ষকের স্থান না পায়Ñ সেক্ষেত্রে আমাদের আন্দোলন করার নির্দেশ দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন তিনি।

এরপর বক্তব্য নিয়ে আসে মেলার শিশুসদস্য অনুষ্ঠানের সভাপতি নুসাইবা। সে তার বক্তব্যে বাংলা নববর্ষের ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে।

সবশেষে কচি-কাঁচাদের উদ্দেশে কিছু বলেন কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার ট্রস্টিবোর্ডের সদস্য কামাল চৌধুরী। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে অনেক ভাষা থাকলেও সব ভাষা বাংলার মতো সমৃদ্ধনয়। এজন্য বাংলা নববর্ষ সকলের।’ আমরা বাঙালিরা কখনই হারিনি, হারতে শিখিনি বলে নিজের মতামত প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন যে, ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এরই মধ্য দিয়ে আমরা যেন চেষ্টা করি বাংলাদেশকে ‘সোনার বাংলায়’রূপান্তর করার। তিনি শিশু-কিশোরদের দেশের প্রতি মমতা ও ভালবাসা গড়ে তোলার অনুরোধ জানান। এরপর পিঠাউৎসবে অংশ নেওয়া সকলকে পুরস্কৃত করা হয়।



সবশেষে অসাধারণ গান, নৃত্য ও আবৃত্তি পরিবেশন করে কচি-কাঁচার শিল্পী ভাইবোনেরা। সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই শেষ হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।

Post a Comment

0 Comments

যে দোয়া পড়া সুন্নত কঠিন বিপদ থেকে বাঁচতে